www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শেষ বিকালের ভালোবাসা

হু হু করে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সেই  দুপুর কাঁটায় কাঁটায় দুইটা থেকে বসে আছেন মোস্তাফা সাহেব নদীর পাড়ে। এখন বাজে চারটা আটচল্লিশ। কি জন্য বসে আছেন তার কারণ টা অনেক ক্ষণ আগেই ভুলে গেছেন তিনি। অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারছেন না । আজকাল এমনটা হচ্ছে। বয়সটা তো আর কম হল না। কেউ বয়স জিজ্ঞাস করলে তিনি সার্টিফিকেটের টা বলে দেন। কারণ তাতে তার বয়স দুই বছর সঞ্চয় হয় তার মতে। এটা বললে তিনি এক রকম মানসিক শান্তি পান। এখন কেউ এসে জিজ্ঞাস করলে নিশ্চিত  বলে দিবেন পঞ্চাশ। সেদিন দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে বাজারে গিয়েছিলেন মাংশ কিনতে। শেষমেষ খালি হাতে ফিরতে হল। এই ভুলো মনের কারনে। পকেট থেকে ফোন টা বের করলেন।  উফ্ ফোনটারও চার্জ শেষ। চার্জ থাকলে মারুর কাছে ফোন দিয়ে কারণ টা জানা যেত। মারু তার নাতনি। ক্লাস নাইনে পড়ে। নাইন কথা মনে করতেই মোস্তফা সাহেব নেচে উঠলেন।
-হ্যাঁ আজ তো নয় তারিখ!
মুহূর্তেই আবার তার মুখ মলিন হয়ে গেল। বিকাল চার টার সময় তার রুপান্তি বেগমের সাথে দেখা করার কথা ছিল নদীর ওপারে।

নভেম্বরের নয় তারিখে রুপান্তি বেগমকে তিনি প্রপোজ করেছিলেন। তারপর দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেম। এবং তিন বছরের সংসার জীবন। এরপর কোন এক কারণে ছাড়াছাড়ি। যে যার মতো থাকে। মোস্তাফা সাহেব অবশ্য অনেক চেষ্টা করেছেন সম্পর্কটা জোড়া লাগানোর কিন্তু রুপান্তি বেগম তা চাননি। কেউই দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবেনি কখন। মোস্তফা সাহেবের জোরাজুরিতে শেষ রুপান্তি বেগম এই শর্তে রাজি হয় যে, তিনি বছরে এক বার এই নয় তারিখে নদীর পাড়ে আসবেন চার টার সময় পাঁচ মিনিটের জন্য। শুধু দু'জন দু'জনকে দেখতে পারবেন তবে কোন কথা বলতে পারবেন না। মোস্তফা সাহেব যদি কথা বলার চেষ্টা করেন তবে আর কখন তাদের দেখা হবে না। মোস্তফা সাহেব সব মেনে নিয়েছেন। তিনি রুপান্তি বেগম কে ভালো ভাবেই চেনেন। এজন্য কখনো কথা বলার চেষ্টা করেন না। শুধু দেখেই যান।

মোস্তফা সাহেবের চোখটা ভিজে আসছে। এক বছর ধরে তিনি এই দিনটার অপেক্ষায় থাকেন। তাছাড়াও আজ তার নাতনির পরামর্শে একটা নতুন পরিকল্পাও ছিল।

মোস্তাফা সাহেব ঘড়ির দিকে তাকালেন বিকাল পাঁচটা।
তড়িঘড়ি করে নৌকায় উঠলেন ওপারে যাওয়ার জন্য।

ঠান্ডা হাওয়ায় শূন্য নদীর পাড়ে একবুক কষ্ট নিয়ে কিছুক্ষণ মোস্তফা সাহেব হাঁটাহাঁটি করলেন। নদীর ঠিক উত্তর পাড়ে তিনি কাউকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলেন। হ্যাঁ রুপান্তি বেগমই তো। মোস্তফা সাহেব ঘড়ির দিকে তাকালেন পাঁচ টা সাতাশ মিনিট।
রুপান্তি বেগম কোন মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ মুছতে মুছতে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলেন ছলছল চোখে মোস্তফা সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে তিনটি তিন রঙের গোলাপ। যেন বয়সটা একটুও বাড়িনি তার সেই একুশেই রয়ে গেছে...
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৬৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • নির্ঝর ২৫/০২/২০১৬
    ভালো লাগলো
  • হরেকৃষ্ণ দে ২১/০২/২০১৬
    মন ভরে গেল।ভলোবাসার গোপনে বিনিদ্র রুপান্তিরা ইতিহাস রচনা করে।ভালো থাকবেন।
  • চমৎকার।
  • নাতনীটা এলো কি ভাবে? ১ম পক্ষ না ২য় পক্ষ? পরিষ্কার হয়নি।
  • ধ্রুব রাসেল ২০/০২/২০১৬
    ভাল।
  • নির্ঝর ২০/০২/২০১৬
    মজা পেলাম
  • বাহ ! সুন্দর
  • একবার পড়ে এডিট করে নিন। যেমন - কাঁটায় কাঁটায়
 
Quantcast