www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

লালচুলের হুমায়ুন আহমেদ আমার মন কেড়ে নিল

হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে চিন্তা করতে গেলে একটা বিরাট ধন্ধে পড়ে যাই। যেমন বিরাট তাঁর ভক্ত আমি -তেমনি বিশাল তাঁর সমালোচক। তখন কলেজে পড়ি। মেসে থাকতাম। ইতোমধ্যে তিনি সাহিত্যজগতে প্রতিষ্ঠিত।  আমি তার ঘোর বিরধি। প্রতিদিন হুমায়ুন আহমেদ কে নিয়ে আমরা তর্কে জড়িয়ে পড়তাম। আমাদের আড্ডার টেবিলে হুমায়ুনিও তর্কে ঝড় উঠত। আমরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তাম। কেও হুমায়ুন এর পক্ষে কেও বিপক্ষে। আমি ছিলাম বিপক্ষের দলে।
তর্ক করতে করতে একটা সময় তার প্রতি আগ্রহ তৈরি হল। সমালোচনা করার জন্য পড়তে শুরু করলাম। লালচুল আমার হুমায়ুন এর পড়া প্রথম গল্প । আমার মনে লালচুল দাগ কেটে গেল। আমি পুরো বইটা পড়ে শেষ করলাম। আমার হুমায়ুন ভালো লাগতে শুরু হল। এর পর পড়লাম জোসনা ও জননীর গল্প। এঁকে এঁকে পড়লাম সব মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস। পড়লাম হিমু, মিসির আলি ও
শুভ্র। পড়ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। কখন, কেন তাঁর বেশ কিছু লেখা গোগ্রাসে পড়েছি ঠিক জানি না। এরপর তাঁর কিছু উপন্যাস ও সায়েন্স ফিকশনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি।

অন্যদিকে দেশের যেকোনো প্রান্তের মতো আমিও হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখার অধীর আগ্রহে টিভি সেটের সামনে বসে থাকতাম।  হুমায়ূন অনেক ক্ষমতাশালী লেখক? হুমায়ূন আহমেদ যাঁর স্বভাবটাই নাকি এমন- তিনি অতৃপ্ত ক্রিয়েটিভ লোক হতে চাননি। ক্রিয়েটিভিটির অন্যতম নিয়তি হলো অতৃপ্ত থাকা। হুমায়ূন আহমেদকে 'বাজারি লেখকে'র তকমা জীবদ্দশাতেই অনেকে তাঁকে এঁটে দিয়েছেন।

আসলে হুমায়ূন আহমেদ শিল্পের কারবারিতে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা সাজতে চেয়েছিলেন। তিনি সেই স্বপ্নেই ভাসাতে চেয়েছিলেন তাঁর ভক্তকুল তথা অনুসারীদেরও। হয়তো এ জন্যই পৃথিবীর ইতিহাসে হলুদ পাঞ্জাবির এত এত হিমু তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল। সাহিত্যিকের বড় কাজ স্বপ্ন দেখানো। কারণ অঘটনঘটনপটীয়সী বিশ্বে মানুষ সত্যিকার অর্থে এক নিরাশ্রিত জীব। হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকার বা জীবনকে অর্থবহ করে তোলার নানা ম্যাজিক দেখিয়ে অবলম্বনহীন এক কঠোরতা যাকে 'ট্রমা'ও বলা যেতে পারে- সেখান থেকে মানুষকে রেহাই দিতে চেয়েছিলেন। সে পথ কোনদিকে গেছে সে বিচার সাইকিয়াট্রিকের। তবে শিল্পের নানা মাধ্যমে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুষের 'কমন' সাংস্কৃতিক কণ্ঠস্বরকে ধারণ করার বাসনা ছিল তাঁর। বহুবিদ জ্ঞানের অধিকারী এই মানুষটি জাদুর কারিগর হুমায়ুন আজ নেই। তার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১১২২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আমি আপনার মতই হুমায়ুন ভক্ত এবং ঘোর সমালোচক। অনেক ভালো লাগে তার লেখা। বাট মাঝে মাঝে অনেক কিছুই কেমন যেনো লাগে। বাট তার জন্য থাকলো শুভ কামনা। যেনো তার বেহেস্ত নসিব হয়।
  • ইসমাত ইয়াসমিন ০৮/১১/২০১৪
    Valo laglo. Ami o ekjon Humayun vokto pathok.
 
Quantcast