www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একজন দিদি একজন লোকজ সঙ্গীত শিল্পী ও সময়ের কথনে অনিমা মুক্তি গমেজ

আত্মকথন লেখার বয়েসটা মনে হয় এখনও হয়নি। বা তেমন কিই-বা অর্জন করলাম যা নিয়ে লেখা যায়? তার পরও মাঝে মাঝে হারিয়ে যাই ছেঁড়া বসন্তের কোন বিকেলে, সন্ধ্যার আড্ডায় কিংবা একাকী ভূবনে।
প্রবাসী জীবনে স্মৃতিকে অবলম্বন করে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে হয়। চাইলে কিছু পাওয়া বা দেখা যায় তেমন ভাবার অবকাশ নেই। অনেকে স্মৃতির সীমিত সাগরে সাঁতরে বেড়াতে হয় কাজের ফাঁকে। পরিবেশের সাথে মন, মনের সাথে বাস্তবতা সামাল দেওয়া বড়ই কঠিন। কঠিন চিরচেনা মানুষ, চিরচেনা সংস্কৃতিকে ভুলে যেতে। প্রবাসের ব্যস্ত সময়ে মাঝে মাঝে বাংলা সংস্কৃতির পরশে ফিরে যাই সেই দিনে সেই ক্ষণে।
গত আগষ্ট ৩১, যুক্তরাষ্ট্রের সিলভার স্প্রিং শহরের অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক বিনোদন কেন্দ্রের হলে অনুষ্ঠিত হলো বিশিষ্ট লোকজ কণ্ঠশিল্পী অনিমা মুক্তি গমেজ এব্ং বাণীদিপ্তী তারকা অপু গাঙ্গুলীসহ স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সঙ্গীত সন্ধ্যা। অনুষ্ঠানে বসেই আবার ফিরে গেলাম পুরনো দিনে। ৯০ দশকে তারুণ্যের জয়োগানে লেখা-লেখির জগতে নবিস হিসেবে পথযাত্রা করি। মূলত কবিতার ভূবনে বিচরণে স্বাচ্ছন্দবোধের নেশাটা চেপেছিলো। একমাত্র জাতীয় কাথলিক পত্রিকা প্রতিবেশীর মাধ্যে সাহিত্য সাগরে পাল উড়ালাম। প্রতিবেশীহীনা আজকের আমি হয়তো রয়ে যেতাম সাহিত্য বিচ্যুত আমি। প্রতিবেশী পাঠ এবং বাণিদিপ্তীর গান মনের আঙ্গিনায় বেঁধেছিলো বাসা। আজও রয়েছে এবং থাকবে চিরকাল। থাকবে প্রাক্তন সম্পাদক ফাদার সুব্রত বনিফাস টলেন্টিনু ও ফাদার কমল কোড়াইয়া।
১৯৯৮ খ্রীষ্টাব্দের কোন একদিন প্রতিবেশীর ছোট বিজ্ঞাপন, বড়দিনের্ জন্য গানের ক্যাসেট প্রকাশ করবে বাণিদিপ্তী। সাহস করলাম। লিখলাম ২টি গান এবং দুই টাকার খামে পোষ্ট করে দিলাম ৬১/১ সুবাষ বোস এভিনিউ ঠিকানা। তারপর অপেক্ষা। জানি মনোনীত হবে না। কিন্তু মাঝ নদী থেকে তো তীরে ফেরার আশায় ডিঙ্গি বাইতেই হবে। অবশেষে তীরে ভিড়ল তরী। তুমিলিয়া গির্জায় মিল্টনের দোকানে খোঁজ নিলাম। হাতে নিলাম ক্যাসেটটি। উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখলাম। হ্যা পেয়ে গেলাম। ক্যাসেটের নাম ছিলো মুক্তির জয়গান.
'শোন বিশ্ববাসী শোন এ বারতা
জন্মেছেন মহাপ্রেমপতী তিনি বিশ্বত্রাতা।
নিশিথ রাতের কালিমা ভেদিয়া উঠিল নব তারা
মুক্তিদাতা জন্মিল আজ মাতি অনন্দে ধরা।
দূতেরা আজি মেতে উল্লাসে
জন্ম বারতা দিলো পৃথিবীকে,
বিশ্বরাজা মেরীর কোলে
ডাকিল দু'হাত তোলে
চল সবে প্রণমী তার ,
তিনি জগত পিতা।'
সুর করেছিলেন দীলিপ সরকার এবং কণ্ঠ দিয়েছিলেন অনিমা দিদি। এই সেই অনিমা দিদি। কোন দিন স্বচক্ষে দেখিনি।
আজ তার গান শোনলাম মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে। অনিমা দি'র গান বিভিন্ন চ্যানেলে বহুবার শুনেছি। একজন লোকজ সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তিনি নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন যোগ্য আসনে। দিদির বৈষিষ্ট হলো তিনি যখন গান করে, তখন তিনি গানের গভীরে প্রবেশ করে গানের যথার্থ মর্ম বাণী পোঁছে দেন শ্রোতাদের অন্তরে। গানের কিছুই আমি বুঝি না, তারপরও বলি, অনিমা দি লোকজ সঙ্গীত ভূবনের যোগ্য উত্তরসূরী। ঈশ্বর তার কণ্ঠকে লোকজ ভূবনের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরী করে দিয়েছেন। ধন্য সেই মা, যেই মা এমন সন্তান গর্ভে ধারণ করে একটি আসনে বসাতে মেয়েকে সাহায্য সহযোগীতা করেছেন।
দিদির অনেক গান বানীদিপ্তীর ক্যাসেটে বন্দী আছে। খ্রীষ্টযাগে কিংবা প্রার্থনায় আমরা আজও আনন্দচিত্তে গাই। দিদি শুরুতে রবীন্দ্র-নজরুল সঙ্গীতে তালিম নিলেও পরে গেয়েছেন অস্ংখ্য আধুনিক গান। পরে তিনি চলে আসেন তার আপন ভূবন মূলধারার গানে। লোকজ গান হলো মাটির গান, বাংলার প্রাণের গান। আধুনিকতা এক সময় লোকজ/রবীন্দ্র/নজরুল থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও এখন পুরোদমে শিকড়ের সঙ্গীত জগত ফিরে এসেছে। এই তো বাংলা গানের সার্থকতা। এর জন্য অনেকে শিল্পী লড়েছেন মূলধারার গানকে বক্ষে ধারণ করে। তাদের মধ্যে একজন আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার, ১৮ গ্রামের নয়, বাংলার ৬৮ হাজার গ্রামের আকাশের নক্ষত্র অনিমা মুক্তি গমেজ।
যুগে যুগে দিদির সুস্থতা, দীর্ঘায়ু ও সফলতা কামনা করি। নমস্য দিদি আপনাকে।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১৩৫৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast