www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শাহানার কষ্ট

জহির এমন করবে শাহানা কখনই ভাবতে পারেনি। জহিরের কলিগরা কিছুটা বুঝতে পেরেছিল।তারা জহিরকে ধান্দাবাজ হিসেবেই জানে।তাই খুব অবাক হয়নি। জহিরের দুই মেয়ে। তারাও খুব কেঁদেছিল । শাহানা পা ধরে অনুরোধ করেছিল। কোন লাভই হয়নি। ঐ রুমা ডাইনির জন্যেই আজ এই অবস্থা। রুমা এত বড় সর্বনাশ করল তার। অবশ্য রুমাকে দোষ দিয়ে লাভ কি ? তার স্বামীর মদদ না থাকলে রুমা কোনদিন এই বড় সাহস পেত না।শাহানার বড় মেয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । ছোটটা কলেজে। শাহানা ভেবে কোন কূলকিনারা পায়না। জহির ব্যাংকে চাকুরি করত। তারই কলিগ ছিল রুমা। একবার অফিসের এক অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল রুমার সাথে। সেদিন সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়েনি। মাত্র একবছরের মধ্যেই এত কিছু হয়ে গেল? শাহানার বড় মেয়ে নিতু অনেক সাহসী । সেও মুষড়ে পড়ে । বাবাকে খুব ভালবাসে সে। এত বড় অন্যায়ের পরও বাবাকে ঘৃণা করতে পারেনা। শাহানার সময় যেন এখন আর কাটতেই চায়না। কি করেনি সে জহিরের জন্যে? চাকুরি করতে পারত। সেই মেধা তার ছিল। সেটাও করেনি । সারাদিন সংসার নিয়েই ভেবেছে। আজ তার প্রতিদান এই? ব্যাংকের ম্যানেজারের কাছেও গিয়েছিল। তিনিও বলেছেন যে তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন। জহিরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। জহির বোঝেনি । রুমার জন্যে এত পাগল ছিল জহির ব্যাংকের অনেকের সাথে এ কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে তাও সে জানতে পারে। ভগ্ন হৃদয় নিয়ে শাহানা ফিরে আসে। এই সমাজ খুব অদ্ভুত এবং নিষ্ঠুর । শাহানা এটা বুঝতে পারে। অনেক আত্মীয়ও আকারে ইঙ্গিতে শাহানাকে দায়ী করে। একদিন তো একজন মুখের উপরেই বলল , “স্বামীকে দেখে দেখে রাখতে হয়। চোখে চোখে রাখতে হয়”। শাহানা কি রাখেনি?? তাহলে কেন এমন হল? অনেক ভেবেও উত্তর পায়না। একদিন বাজারে জহির রুমাকে একসাথে দেখে। সেদিন খুব মরার ইচ্ছে হয়েছিল। মেয়ে দুজনের জন্যেই খারাপ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। নাহলে কবেই...।মেয়েদের জন্যে এখন আবার বেশী চিন্তা হয়। কে বিয়ে করবে এখন তার মেয়েদের? করলেও ভবিষ্যতে নানা কথা শোনাবে । এদিকে জহির ভালই থাকে। সুখের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে। শাহানার কথা মনেই পড়েনা । রুমার সাথে শাহানার কোন কম্পেয়ারই চলেনা। রুমা অনেক চটপটে আর সাবলীল । শাহানা অনেক ব্যকডেটেড । জহিরের বয়স পঞ্চান্নের কাছাকাছি। আরও অনেকদিন বাঁচতে ইচ্ছে করে। নব জীবন যৌবন লাভ করে। কিন্তু প্রকৃতি বোধহয় তার এত বড় পাপ আর নিষ্ঠুরতা সহ্য করার জন্যে প্রস্তুত ছিলনা । ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যা শুরু হয়। সবাইকে সন্দেহ হয় জহিরের । মনে হয় সবাই তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। সবাই তার মনের কথা জেনে যাচ্ছে। দুজন নিরীহ লোক পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও মনে হয় তারা জহিরের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করছে। কিছু ভাল লাগেনা। রুমাকেও আর ভাল লাগেনা। রুমাও এটা বুঝতে পারে। রুমা বুদ্ধিমতী । আগের স্বামী তাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল। কিন্তু জহির সহজ সরল আর রাগ নেই। এটাই তার সবচেয়ে ভাল লেগেছিল। ব্যাংকে প্রায় ৮-৯ ঘণ্টা পাশাপাশি ডেস্কে কাটিয়েছে অনেক দিন। জহিরের যে সাজান গোছান সংসার আছে ভুলেই গিয়েছিল রুমা। নিজের স্বার্থটাই দেখেছিল। ভাল থাকতে চেয়েছিল আর দশটা মেয়ের মত। রুমা দ্রুত জহিরকে শহরের বড় মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যায় । তিনি সব শুনে কিছু ওষুধ আর উপদেশ দেন। খেয়ে কিছুটা ভাল লাগে জহিরের। আবার কিছুদিন পর খারাপ লাগা শুরু হয়। ভাল থাকার চেষ্টা করেও ভাল থাকতে পারেনা। তার পাপই তাকে ভাল থাকতে দেয়না। মনের ভেতর কেমন জানি এক অশান্তি কাজ করে। রাতে ঘুম হয়না। শাহানার কথা মনে হয়। নিতু নিশুর কথা মনে হয়। বিশেষ করে নিশুর কথা খুব মনে হয়। বাবাকে কত ভালবাসত নিশু । চকলেট নিয়ে গেলে খুশী হয়ে জড়িয়ে ধরত। ইদানিং একটুকুতেই জহিরের কান্না আসে। কেন এত বড় ভুল করল জীবনে ? কিছুই ভেবে পায়না। একদিন রাতে হঠাৎ খুব খারাপ লাগতে থাকে। বুকের ভেতর কেমন করতে থাকে। গ্যাসের ওষুধ খায়। অস্বস্তি কমেনা। এ্যাম্বুলেন্স ডাকে রুমা। এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। চেতনা পুরোপুরি লোপ পায়না জহিরের । এ্যাম্বুলেন্স আওয়াজ করে ছুটতে থাকে। নিতু নিশুর কথা খুব মনে হয়। খুব জড়িয়ে ধরে আদর করতে ইচ্ছে করে......
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০০৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast