www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অপদার্থ

শরতে ফুলের মেলা - টগর, শিউলি, কাশ। সাদা কাশ ফুলে ছুটির গন্ধ মাখা।আমার অপদার্থ দাদাটা বলতো অন্য কথা। পোশাকি নাম একটা ছিল তার। তবে, সে নামে কেউ তাকে ডাকতো না, আর ডাকবেই বা কেন? জগতের কোন কাজে সে এলো? না বাবা-মা,না বউ-ছেলের। চিরটাকাল সে অপদার্থই থেকে গেলো,এমনই সে অপদার্থ!
আমার তখন বছর বারো আর দাদা আঠেরো। বলা বাহুল্য,লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিলো সে বছর তিন-চার আগেই। তবু, মূর্খ দাদার একটা কথা এখনো কানে বাজে আমার –
“বলতো, এখন কাশ ফুল কেন মাটির বুক চিরে মাথা তুলে ওঠে? আর কেনই বা তারা মাথাটা দুলিয়ে চলে- অনবরত?”
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম তার মুখের দিকে। সে বলে চলে, “দেখ, ওপরে মেঘের রং সাদা আর কাশফুলও সাদা। এত সাদায় কাশফুলের মন কেমন করে ওঠে! তাই সে রঙ খুঁজে বেড়ায়। আমি যে এত ঘুড়ি ওড়াই তা ওই কাশফুলের জন্যেই। আমার ঘুড়ির এত রঙ! হলুদ-কমলা-লাল-নীল, আকাশ আলো করে উজ্জ্বল রঙের বাহার ছড়িয়ে দেয়, কাশফুল হাঁ করে দেখে এদিক থেকে ওদিক”। বলতাম তুই শুধু অপদার্থ নস, পাগলও বটে!
তবে, সারা তল্লাটে তার সঙ্গে ঘুড়ির প্যাঁচ খেলে জিততে পারতো না কেউই।চিলের মতো ছোঁ মেরে কাটা ঘুড়ি ধরত সে। একবার,বাঁশ ঝাড়ের মাথায় একটা ঘুড়ি আটকে গেছিলো। সাহস করে কেউ উঠতে পারল না। বাঁশগাছ বেয়ে উঠতে লাগলো সে। খানিকটা ওঠার পর কঞ্চিতে পিঠ কেটে গেলো অনেকটা।নীচ থেকে বারণ করলাম কত! কিন্তু, আমার কথা শুনবার লোক সে! রক্তমাখা পিঠ নিয়েই উঠে গেলো আর বিজয়ীর হাসি নিয়ে ঘুড়ি সমেত নেমে এলো। আমি ছিলাম তার সহকারী। কাঁচ গুঁড়ো করে ভাতের সঙ্গে মেখে মাঞ্জা তৈরি করতে কত দুপুর পার করেছি! ঘুড়ি ওড়ানোর সময় আমার কাজ ছিল লাটাই ধরে থাকা আর উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করা কখন সে আমায় স্বাধীন ভাবে একটু ঘুড়ি ওড়াতে দেবে।তার সুতোর টানে ঘুড়ি একেবারে সাঁই সাঁই করে পুব থেকে পশ্চিমে। মাঝে মাঝে আর থাকতে পারতাম না, “বলতুম, দে না দাদা একটু, আমি নিজে নিজে ওড়াই খানিকক্ষণ।” –“বলতো দাঁড়া, কটা ঘুড়ি কেটে নিয়ে আকাশটা সাফ করে দিই।আমাদের ঘুড়িটা যখন একা রাজার মতো রাজত্ব করবে তখন তোকে দোবো ওড়াতে। দেখতে দেখতে নিমেষে ফাঁকা হয়ে গেলো আকাশ। ভয়ে অন্য ছেলেরা ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ করে দাঁড়িয়ে।
রাজ্যের ভার আমার হাতে দিয়ে,কাশবনের ধারে খানিক বিরতি নিচ্ছেন আমার দাদা। মুক্তির উল্লাসে ছেড়ে যাচ্ছি লাটাইয়ের সুতো। তবুও, ঘুড়িটা ঠায় তাকিয়ে আছে আমার দাদার দিকে-যেমন করে প্রতীক্ষা করে ঠায় দাঁড়িয়ে-এক অনুগত সেনাপতি, তার মহামান্য রাজার নির্দেশের-
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬০৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আবু সাইদ লিপু ৩১/০৮/২০১৭
    সুতার মাঞ্জা! কত করেছি!
  • আবু সাইদ লিপু ২১/০৮/২০১৭
    আমরা বলি নাটাই।
  • সাঁঝের তারা ২০/০৮/২০১৭
    খুব ভালো...
    • সমির প্রামাণিক ২১/০৮/২০১৭
      উত্সাহ পেলাম আপনার মন্তব্যে। ধন্যবাদ।
  • সুন্দর উপস্থাপনা
    • সমির প্রামাণিক ২০/০৮/২০১৭
      ধন্য হলাম আপনার মন্তব্যে।
 
Quantcast