www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কন্ঠমণী

. কন্ঠমণী
~~~~~~~~

দিনটা ছিল ২২ শে আষাঢ, রিঙ্কি আর তার বন্ধু পিঙ্কি গ্রামের মাটি পথ ধরে স্কুলে যাচ্ছে, লাল কাকুর চমচমের দোকানটা পার হতেই, তাদের গ্রায়ে একটা ভযের শিহরন জাগে, পাশে থাকা ভাঙা রাজবাড়ীটি দেখে। তারা পরস্পরে গল্প করে. জানিস ঠাম্মা বলে এই বাড়িতে নাকি একটা পেতনি আছে, সে কথা শুনে পিঙ্কি বলে হ্যাঁ আমার মাও তাই বলে। তারা চলে যায় স্কুলে। রিঙ্কি আর পিঙ্কি পরস্পরেই অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী। তাদের স্কুলের সবচেয়ে বড়ো পবলেম ছিল ঝিমলি দিদিমণি, সে প্রতিদিন একগাদা করে হোমওয়ার্ক দিত, আর যে না করে আনতো তাকে গোটাদিন কানধরে দাঁড়া করিয়ে রাখতো বেঞ্চের ওপরে। ক্লাস শুরু হলো, ম্যাম প্রথমেই প্রশ্ন করলেন হোমওয়ার্ক কে কে করে আনোনি দাঁড়িয়ে পরো? বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই দাঁড়িয়ে পড়লো বেঞ্চের ওপরে, পাক্কা দু ঘন্টা আগামী তিনটা ক্লাস তাদের এভাবেই দাড়িয়ে থাকতে হতো। খুব ক্লান্ত হয়ে আজ দুজন বাড়ি ফিরছে, একে অপরকে বলছে কি সব ভূল ভাল অঙ্ক করায় বলতো, নিজে তো ক্লাসে এসে দুটো অঙ্ক বই দেখে টুকে দেয় আর আমাদের ধরিয়ে দেয়, ২০ খানা; তারচেয়েও কঠিন অঙ্ক। এ কথা শুনে পিঙ্কি বলে আদেও এ দিদিমণি হবার যোগ্যই না। তারা বাড়ি চলে যায়। পা গুলো যেন ব্যাথায় ফেটে পরছে। পরের দিন সকালে উঠেই আবার স্কুল। না গিয়ে উপায় নেই বাড়িতে থাকলেও গোটাদিন বইটা সামনে নিয়ে বসে থাকতে হয় সে পড়ি নয় নাই পড়ি। আজ দুজন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে আর বুদ্ধি আটছে থাক রে আজ আর স্কুল যাব না। চল চারুর বাড়িতে কাটিয়ে আসি, চারু তাদের বান্ধবি। দুজনে রওনা দিল চারুর বাড়ির রাস্তায়, কিন্তু সে কি চারুর মা বললো চারু তো বাড়িতে নেই সে তার দিদার বাড়ি ঘুরতে গেছে দুসপ্তাহের জন্য। মুখ দুটো ছোটো হয়ে এলো তাদের। তারা আবার ফিরতি পথে রওনা দিল, সবশেষে টুনটুনি মাসির চায়ের দোকানে এসে বসলো। আকাশে পুরো মেঘ যখন তখন বৃষ্টি হতে পারে, এখন আর স্কুল যাবারো উপায় নেই সময় অনেক হয়েছে, টুনটুনি মাসির কাছ থে দুটাকা দিয়ে দুটো বিস্কুট নিয়ে দুই বান্ধবি জমিয়ে গল্প জমানো শুরু করবে এরই মধ্যে পিঙ্কি লক্ষ্য করলো সেই রাস্তা দিয়ে রিঙ্কির বাবা আসছে, সে রিঙ্গির চুল টেনে তার বাবারে দেখাতেই রিঙ্কি বললো এখানে বসে আছিস কেন শিগগির পালা... দুই বন্ধু মিলে দৌ দিল একনিমেষে, আর তারই মধ্যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে গেল। তারা দৌড়তে দৌড়তে সেই রাজবাড়ীতে চলে এলো সেটা তারা নিজেরাই বুঝতে পারলো না। রিঙ্কি বললো আরে পিঙ্কি আমরা কোথায় এলাম রে? এতসুন্দর বাড়িটা। হঠাৎ করে চাপা গলায় কথা থেকে একটা উওর এলো "নীলকন্ঠ রাজবাড়ীতে"। রিঙ্কি তখন পিঙ্কির পিঠে একটা বিম করে বসিয়ে দিয়ে বরলো কিরে ভূতের মতো কথা বলছিস কেন?
কৌ আমি তো কিছু বলি নি!
তুই বলিস নি! তবে কে বললো?
আবার সেই একই গলায় আওয়াজ এলো আমি বলেছি, দুজনেরই পা থর থর করে কাঁপতে শুরু করলো, রিঙ্কি তখন বললো আমার ঠাম্মা তো রাজাবাড়ীটির নাম নীলকন্ঠই বলেছিল... পিঙ্কি ভীত গলায় বললো কে তুমি? কন্ঠমণী।
হঠাৎ তাদের সামনে একটি মেয়ে শিশু কোথা থেকে উদয় হলো। সে দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই তার গলার স্বর, মেয়েটা প্রশ্ন করলো তোমরা এখানে কি করতে এলে? রিঙ্কি ভীত গলায় বললো আমরা ভূল করে ধুকে পরেছি আমাদের ছেরে দাও আমরা এখুনি চলে যাচ্ছি। কন্ঠমনী বললো আরে ভয় পাবার কিছু নেই আমি তোমাদের মতনই তোমরা আমার বন্ধু হবে? পিঙ্কি ছিল বন্ধু প্রীয়,আর এতসুন্দর একটা বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে কে বা বন্ধুত্ব করতে না চায়? সে বললো হবো কি অবশ্যই হবো, কন্ঠমণী হাসলো। রিঙ্কি প্রশ্ন করলো তুমি এখানে কি করে এলে? এখানে তো ভূত থাকে! কন্ঠমণী বললো আমিই ভূত, কিন্তু ভয় পাবার কোন কারন নেই আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করবো না। পিঙ্কি বললো তুমি ভূত হলে কিকরে?
কন্ঠমনী বললো আমার বাবা ছিল এই গ্রামের রাজা তার অনেক কালের ইচ্ছে ছিল একটি ছেলে সন্তানের কিন্তু সবশেষে আমি হই, মেয়ে হবার কারনে আমাকে আমার বাবা মেরে ফেলে। এবং তারপর তারা এখান থেকে চলে যায় আর সেদিন থেকে আমি ভূত হয়ে এই রাজবাড়ীর ভেতরে বাস করছি।
দু বান্ধবির চোখে জল এলো। কন্ঠমনী তাদের জিঞ্জেস করলো তোমরা স্কুল ড্রেস পড়ে কেন? আর ভীজে গেলেই বা কি করে? রিঙ্কি তার স্কুলের ম্যামের কথা সব বললো কন্ঠমণীকে, কন্ঠমণী হেসে বললো চিন্তা কোন না আমি তো আছি, আমি তোমাদের ম্যামকে শাহেস্তা করে দেব...এই বলে কি এক যাদু করলো তাদের ভেজা জামা নিমেষেই শুকিয়ে গেল। দুই বান্ধবি খুব খুশিতে বাড়ি গেল।
পরের দিন স্কুলে গেল দুজন, ম্যাম প্রশ্ন করলেন যে যে হোমওযার্ক করে আনোনি তারাতারি বেঞ্চের ওপরে দাঁড়িয়ে যাও। কিন্তু যা হলো তা সত্যই অবাক সবাই অবাক হয়ে দেখলো ম্যাম তার চেয়ারের ওপরে দাঁড়িয়ে গেছে। ম্যাম নিজেও তা বুঝতে পারলো না, ভয়ে থর থর করে কাপতে কাপতে প্রশ্ন করলো কে কে তুমি, কি চাও? টেবিল থেকে একটা চক আপনা আপনি হাওয়ার উড়ে গেল বোর্ডের দিকে... ম্যাম পালানোর চেষ্টা করলো খুব কিন্তু কেউ যেন তার পায়ে মোটা শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে সে চাইলেও নড়তে পারছে না। সে তাকিয়ে দেখলে বোর্ডের মধ্যে একাকী চক কি যেন লিখতে দ্রুত গতিতে, লিখা শেষ হয়ে যাবার পরই একটা ঝোড়ো হাওয়া যেন ঘড় থেকে বাইরে চলে গেল। ম্যাম এবার হাটতে পারছেন। সে ব্লাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তাতে লিখা।


"জোর করে ঘাড়ে চাঁপিয়ে
বইয়ের বোঝা খানি,
কি প্রমান করছো তুমি?
এ শিক্ষার বানী!
শিক্ষা দাও মেপে মেপে
মনের ভেতর গেথে,
যেন ইনটারভিউএ ক-খ বলতে
লাগে না কাউকে ভিমরি খেতে।
শিক্ষা সফল সেদিন হবে
মেয়েদেরো হবে যেদিন গোনা
মেয়ে পেয়ে উল্লাসে পিতা
বুকে জড়িয়ে নিয়ে ডাকবে তাকে সোনা...."


সৌরভ তালুকদার
(কল্পনার ওপর ভিত্তি করে লেখা)

সমাপ্ত
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৫৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আবু সাইদ লিপু ৩১/০৮/২০১৭
    কল্পনাশক্তি প্রবল
  • অধীতি ২৬/০৮/২০১৭
    অনেক ভাল লাগল
  • মোনালিসা ২৪/০৮/২০১৭
    ভাল লাগল
  • সুশান্ত বিশ্বাস ২২/০৮/২০১৭
    আপনার কল্পনা অনেক সুন্দর।
 
Quantcast