www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বামী পরমানন্দ ও সরস্বতী তত্ত্ব

স্বামী পরমানন্দ মহারাজ বলতেন বাইরে খুঁজলে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না, ঈশ্বর তত্ত্বরূপে অন্তরে বিরাজমান। প্রায় সবাই এটা জানলেও সাহস করে অনেকে তা বলেননি অথবা সময় হয়নি কিংবা মানুষ বুঝতে পারবেনা বলে গোপন করে গেছেন। স্বামী পরমানন্দ পরিষ্কার বলেছেন ঈশ্বরত্ব অর্জন করতে হয়। সরস্বতী তত্ত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন-

‘সরস’ ধাতুর সাথে বতুপ প্রত্যয় যোগে হয় সরস্বত স্ত্রী লিঙ্গ বুঝাতে ‘ঈ’ যোগ করে ‘সরস্বতী’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। ‘সরস’ কথার অর্থ রসাল বা সমৃদ্ধ, ক্ষমতা বতুপ প্রত্যয় মানে অধিকারী। তাহলে সরস্বতী অর্থ দাঁড়ায় সমৃদ্ধ বা উন্নত করার ক্ষমতা আছে এমন কোন স্বত্তা।

প্রথম প্রথম বৈদিক ঋষিদের দৈনন্দিন জীবনে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ধরা পড়ে জলের সরস্বতী রূপ। কারণ কৃষি, শিল্প, এমনকি বাঁচার যে কোন তাগিদেই জল প্রয়োজন। জল যেন মাতৃস্বরূপা, যার পবিত্র স্পর্শে জীব নিয়ত লালিত-পালিত হচ্ছে। তাই ঋষিগন হিমালয় জাত সে যুগের শ্রেষ্ঠ স্রোতস্বিনীর নামকরণ করেছিলেন সরস্বতী, যা কালে প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্ট কারনে বিলুপ্ত।

জ্ঞান মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করে, সমস্ত রকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করে, সমস্ত সমস্যার সমাধান’ই হচ্ছে আমাদের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান। আমাদের এই মরুভূমির মতো জীবন তাই সুখে, শান্তিতে ও জ্ঞানের ঐশ্বর্যে ভরে ওঠে। সেজন্যই জ্ঞানদেবী সরস্বতী । শুভ্রবসন স্বত্ব গুণের প্রতীক। পুস্তক জ্ঞানের প্রতীক।

হংস এমন প্রানী যে দুধ ও জলের মধ্যে শুধু দুধের ভাগটা টেনে নিতে পারে, এবং মাটি, বাতাস, জল সর্বত্র অবাধ বিচরন করতে পারে। জ্ঞানীও সব জায়গায় গ্রহণযোগ্য  এবং ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ, গুণ-দোষ আলাদা করতে পারে তাই সরস্বতীর বাহন হংস।

সরস্বতীর আসন পদ্ম ফুল জলে থাকে অথচ জল ধারন করেনা। এক বৃন্তে গাঁথা শত পাপড়ির মতো সংসার আবর্তে থেকে জ্ঞানীর বুদ্ধিদীপ্ত মন বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শত চিন্তা ভাবনা একত্রিত করতে পারে এবং সুখে দুঃখে অবিচল থাকে।

সরস্বতীর বীণা আসলে দেহরূপ বীণা যন্ত্রের প্রতীক। ভারতীয় শাস্ত্র মতে যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে তাই আছে এই দেহভান্ডে। বীণা যন্ত্রের সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি-দেহস্থিত কুলকুণ্ডলিনী শক্তিকে ষটচক্ররূপ মূলাধার (গুহ্যদ্বারে নিকটস্থ গ্রন্থি), স্বাধিষ্ঠান (লিঙ্গ দ্বার স্থিত গ্রন্থি), মণিপুর (নাভি মণ্ডলস্থিত গ্রন্থি), অনাহত (বক্ষঃস্থলস্থিত গ্রন্থি), বিশুদ্ধ (কন্ঠনালিস্থিত গ্রন্থি) ও আজ্ঞাচক্র (ভ্রু যুগলের মধ্য স্থিত গ্রন্থি) ভেদ করে সহস্রারে (মস্তিস্ক স্থিত গ্রন্থি) উত্তরণের এক মহাসুর।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ২১৭১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/১০/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অনেক আগের লেখা পড়লাম কবি স্বামী পরমানন্দ মহারাজ বলতেন
    বাইরে খুঁজলে ঈশ্বরকে পাওয়া যায়
    না, ঈশ্বর তত্ত্বরূপে অন্তরে বিরাজমান।
  • Tapas Acharjee ২৯/১০/২০১৪
    This so nice writings, so I appreciate to write more and more for the world more deeply
 
Quantcast