www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একাত্তরের মীরজাফর (২য় অংশ)

মোল্লা সবাইকে একটা পিয়াজু আর এক কাপ চা বিনা পয়সায় খাইয়েছে। সবাই মোল্লার প্রতি সন্তুষ্ট। পরেরদিন সকালে সবাই ব্যাংকার খোড়ার কাজে নেমে পড়ে। মজুরির টাকা দেয়া হয় মোল্লার দোকানে। মোল্লা সন্ধ্যেবেলা সবাইকে টাকা পরিশোধ করে চলে যায় পাক- বাহিনীদের ঘাটিতে। রাতে তাদের সঙ্গে ঘুমায়। শ্রমিকরা পাঁচ দিন ধরে কাজ করছে। মোল্লা তাদের মজুরির টাকা ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিচ্ছে। আজ কাজের শেষ দিন। কাইয়ুম ব্যাংকার খুড়ছে মসজিদের পেছনের বাশঝাড়টায়। দুপুরবেলা তার খাবার আনার কথা ছিল হোসেনের। কিন্তু হোসেনের কোনো পাত্তা নেই। হোসেন কাইয়ুমের ছোট ভাই। সারাদিন সে ছোট্ট গরুটা নিয়ে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যেবেলা গরু নিয়ে ঘরে ফিরে। কাইয়ুম কাজ শেষ করে সন্ধ্যাবেলা ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে। হোসেন এখনো বাড়িতে ফেরে নি। কাইয়ুম হাত মুখ ধুয়ে বাজারে যায় মজুরির টাকা তুলতে। মোল্লা কাজের লোকদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেছে তার দোকানে। দশ পনেরো জন মিলিটারিও খেতে এসেছে। খাবার আইটেম মুগ ডাল,গরুর মাংস আর লাউ চিংড়ি। কাজের লোকেরা সবাই তৃপ্তি সহকারে খানা খেয়ে মজুরির টাকা নিয়ে বিদায় নিয়েছে। কাইয়ুমকে চাল তরিতরকারী কিনতে হবে। বাড়িতে ভাইটা না খেয়ে আছে। কাইয়ুম সেড় দুয়েক চাল,ডাল আর সবজি কিনে বাড়ি ফিরে। বাড়ির চারপাশ অন্ধকার। চাঁদের অমাবস্যা যেন এই বাড়িটিকে গ্রাস করে ফেলেছে। হোসেন এখনো বাড়িতে ফেরেনি। কাইয়ুম গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখল গরুটিও নেই। আশেপাশের সব বাড়িতে খোজা হল। কিন্তু হোসেনের কোনো খবর পাওয়া গেল না। মাঠ ঘাট তন্ন তন্ন করে খোজা হল। অবশেষে হোসেনের খোজ পাওয়া গেল পাক বাহিনীদের ঘাটিতে। তাকে আবিস্কার করা হল মুমূর্ষু অবস্থায়। পাকিস্তানি মিলিটারিরা কোনো এক অজানা কারণে তাকে মারধোর করেছে। কাইয়ুম মেজর সাহেবের হাত পা ধরে ভাইকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। হোসেনকে ডাক্তারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিন দিন অচেতন অবস্থায় থাকার পর আজ তার জ্ঞান ফিরেছে। তার ভীষণ শ্বাষকষ্ট হচ্ছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সে যেন কী খুজছে। চোখ দিয়ে তার অনবরত পানি পড়ছে। দশ বছর বয়সী দুরন্তপনা হোসেনকে শান্ত , সুবোধ বালকের ন্যায় দেখাচ্ছে। কাইয়ুম তার পাশেই বসে আছে। হোসেন অনর্গল কথা বলছে। কিন্তু তার কথা স্পষ্ট হচ্ছে না। শুধু তার মুখে মোল্লার নাম স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর হোসেন আবার অজ্ঞান হয়ে যায়। রাত একটার দিকে আবার তার জ্ঞান ফিরে। কিন্তু ক্ষনিকের জন্য। তারপর চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে তাকে বাড়ির পাশের বাশঝাড়টায় কবরস্থ করা হয়।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৩৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/১২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সোলাইমান ২০/১২/২০১৬
    দারুন সত্য উচ্চারন ! অনন্য কাব্যে বিমুগ্ধ !!
    প্রিয় কবির জন্য এক রাশ রক্তিম শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রেখে গেলাম ।
    ভালো থাকুন !!
  • আব্দুল হক ১৯/১২/২০১৬
    কিভাবে মিরজাফর জানলাম না । েস সময় আমাদের দেশ পাকিস্থান ছিল। যারা অন্যায় করেছে আমি ঘৃণা করি কিন্তু সবাই এটি করেনি।
    • কুয়াশা ২০/১২/২০১৬
      পুরো গল্পটা পড়লে আশা করি মোল্লা রূপী কিছু মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ প্রিয়।
 
Quantcast