www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৫১

নিজের বুলি
-------
বেশিরভাগ মানুষ নিজের কথা নিজে বলে না বা বলতে পারে না। অন্যের বুলি আওড়ায়।
যেমন কোন রাজনৈতিক নেতা। ভুল কি ঠিক, ভাল কি মন্দ, সত্যি না মিথ্যে ওসবের ধার না ধেরে সেই রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা বলবেন। কেন না প্রতিটি রাজনৈতিক মতাদর্শের একটি নির্দিষ্ট মণ্ডলী আছে। তাদের বাইরে বেরিয়ে কিছু বলা আদৌ সম্ভব নয়। অতএব নিজে কি বোঝে কি বোঝে না এসব তিনি বলতেও পারবেন না। আবার যে মতাদর্শ বলছেন সেটা ভুল বা মন্দ বা মিথ্যে তা নাও হতে পারে আবার হতেও পারে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তাকে তা মানতেই হবে। এবং সেই বুলি তাকে বলতেই হবে।
কোন অফিসের কর্মচারীকে সেই অফিসের ডেকোরাম অনুযায়ী কাজ করেতেই হবে। নিজের খেয়াল খুশি মত যেমন তেমনভাবে চলতে পারবেন না, তেমনি বলতেও পারবেন না। তবে অফিস বসের মন মানিতে যে/যারা বিক্ষুব্ধ হয় সে/তারা কিন্তু সেই অফিসে থাকতে পারে না বা পারবেন না। তার মানে সেই মতাদর্শের বুলি না বলা বা না চলা কর্মচারীকেই সরে যেতে হয়। অর্থাৎ অফিস কর্মচারী তার নিজের কথা বলতে পারে না। অফিসের মধ্যে থেকে সেই অফিসের ভাবনা অনুযায়ী কথা বলতে হয়। আছে অথচ বলতে হয় 'না, নেই তো।' আবার নেই তাও বলছে 'হ্যাঁ আছে, নিশ্চয় আছে। পাবেন। ওদিকের ফাইল এদিকে অথবা এদিকের ফাইল ওদিকে গেলে তবেই পাবেন। দেরি হবে।'
আপনাকে কেউ হুমকি দিয়ে গেল। দেখবেন সেই দাদা নিজের ভাষায় কথা বলছে না। তার মাথার উপরে অন্য কোন দাদা, নেতা বা কোন হোমড়া চোমড়ার হাত আছে তাই সেই দাদার পক্ষে হুমকি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আমাদের দেশে এই মাথার উপরে ছাদের মত অনেক দাদার হাত আছে। তাই তাদের বক্তব্য ঘুরে ফিরে এভাবেই আসে - "যা। করে ফেল। কোন চিন্তা নেই। আমি তো আছি।" ফলে যাই তাই অন্যায় অত্যাচার অবিচার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
আবার এই অবস্থান একজোটে সরকারী বেসরকারী কিংবা ব্যক্তিগত অনেক সম্পত্তি ভেঙেচুরে দিলেও, নষ্ট করে দিলেও কারো কিছু হয় না। কেউ কোন প্রকার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে না। কিংবা নিলেও কাজ হয় না। যাদের বা যার যায় শুধু তারই যায়। আবার এই একই অবস্থানে একক কেউ করলে প্রশ্ন ওঠে - আপনি আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না? এবং এককের বিরুদ্ধে ন্যায় সঙ্গত হলেও নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যদি সে ব্যাপরে না তো অন্য ব্যাপারে তাকে নানান ভাবে হ্যারাস করা হয়।
কিন্তু একজোটে অন্যের বুলিতে ইচ্ছেখুশি আইন হাতে তুলে নেওয়া যায়। বলা যায়। যা ইচ্ছেখুশি করা যায়।
আবার আপনি যদি ওই হুমকি দেওয়া দাদার মাথায় হাত রাখা দাদা বা তার উপরে কোন দাদা ধরতে পারেন তাহলে ওই হুমকি দেওয়া দাদা চুপ করে যায়। কোন বুলি তার মুখে আসে না। তার মানে আপনিও নিজের বুলি বলতে পারলেন না - "কি? তোর এতবড় সাহস? আমাকে যাই তাই বলে যাস!"
এসব যদি আপনি বলেন বা বলার চেষ্টা করেন তাহলে তার পরিণতি দিনে দিনে আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে। এসব বুলি বলা বা করা ভুল না ঠিক, ভাল না মন্দ, সত্যি না মিথ্যে এসব কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না।
আপনাকে একজন বলল - 'হ্যাঁ, কালকে আসুন না। কোন অসুবিধা হবে না। আমি করে দেব।' পরেরদিন আপনি সব গুছিয়ে নিয়ে গেলেন কিন্তু তিনি বললেন - 'না। হবে না দাদা।' তার মানে তিনি আগে নিজের বুলি বলতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আসল কাজের সময় আর বলতে পারলেন না। অন্যের বুলি ( তার বস বা অন্য কেউ) বলতেই হল।
সংসারে বাবা মায়ের নেক নজর যে সন্তানের উপর আছে তার গলার আওয়াজ আর অন্য সন্তানদের গলার আওয়াজের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। টিন এজের সময় ছেলে মেয়েদের গলার আওয়াজের মধ্যে এই ঝাঁজ পাওয়া যায়। বাবা হয়তো না বলল কিন্তু মার প্রশয়ে সেই ছেলে বা মেয়ের মুখে মুখে উত্তর বেড়ে গেল। কিংবা মা না বলল বাবার প্রশয়ে বা বাড়ির অন্য কারোর প্রশয়ে ছেলে মেয়ে মুখে মুখে তর্ক জুড়ে দিল। অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ে নিজের বুলি বলছে না।
এখন বাবা মা বা বাড়ির অন্য সবাই যদি একজোটে না না করে তাহলে দেখবেন ছেলে বা মেয়ের মুখে কোন বুলি নেই। যদিও বলে তাতে শুধু যুক্তি আনা ছাড়া অন্য কোন বুলি থাকে না।
ঠিক একই রকম ভাবে সাধারণ সামাজিকতায় দেখা যায় স্বামী কাজ কর্ম বা চাকরী করে আর স্ত্রী সংসারে থাকে। কিন্তু যদি স্ত্রী চাকরী করে তাহলে সেই স্ত্রীর কথা এবং যারা ঘরে থাকে তাদের কথার মধ্যে পার্থক্য নজরে পড়বেই। দুটো ক্ষেত্রে ভাল কি খারাপ সেটা অন্য প্রশ্ন কিন্তু বুলি বলে নিজের তবে তা অন্য ভাবনায়।
শহরের রাস্তায় আপনি যদি কোন ঠিকানা কাওকে জিজ্ঞেস করেন তাহলে অবশ্যই দুটো উত্তর পাবেন এক জানি না দুই সঠিক নির্দেশনা। আমরা তবুও বাজিয়ে নিই তাই আর একটু এগিয়ে আবার একজনকে তারপর আবার। কারণ শহরের মানসিকতাকে আমরা খুব সরল ভাবি না। ভাবি অন্য ভাবনার বুলি বলা জীবনযাত্রা। সে যারা শহরে বাস করে তারাও।
যখন প্রেমে পড়ে তখন প্রেমিক প্রেমিকাকে, প্রেমিকা প্রেমিককে যে ভাষা বলে তা সম্পূর্ণ অন্য মাত্রার ভাষা। যুগ জীবন বাস্তব পরাবাস্তব বর্তমান সামাজিক সব ছড়িয়ে অন্য এক অপার ভাষা। যে ভাষায় শুধু মোহিত হয় আর জগৎ ছাড়িয়ে অনন্ত রচনা করে। সেই বুলি কখনই তাদের নিজের ভাষা নয়। অন্তর থেকে উৎসারিত ভাষা। যা সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যায়। তারা নিজেরাও ভুলে যায় কি বলেছিল।
এই যে গণতন্ত্রে ভোট হয়। তাতে জনগণ যে ভোট দেয় কেউ প্রার্থী দেখে ভোট দেয় না। শুধু পার্টি দেখে ভোট দেয়। আর এখন পার্টির দাপট দেখে ভোট দেয়। তার মানে জনগণও নিজের কথা নিজের মত করে বলতে পারে না।
আবার যে প্রার্থী জেতে সেও পরবর্তীতে নিজের মত কাজ করতে পারে না। পার্টির মত করে কাজ করতে হয়। তার মানে তিনিও নিজের কথা বলতে পারেন না। ফলে দেখা যায় ভালো মানুষও খুব সহজে দুর্নীতির মধ্যে ঢুকে যায়।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৭৭৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/১২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সংকেত ০৭/১২/২০১৭
    খুব সুন্দর
  • সেই বুলি কখনই তাদের নিজের ভাষা নয়। অন্তর থেকে উৎসারিত ভাষা। যা সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যায়। তারা নিজেরাও ভুলে যায়।
  • সুন্দর বলেছেন।
  • ভালো লাগলো
 
Quantcast