www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৩৫

ন্যায় অন্যায়
------------

ন্যায় অন্যায় বাদ প্রতিবাদ খুবই ন্যাহ্য হয়ে পড়ছে বর্তমানে। কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় এইসব ভাবতে ভাবতে সব গুলিয়ে যাচ্ছে। কি করি কি না করি। কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক হিসেব করতে করতে সময় বয়ে যায়।
পাড়ায় একটা খুন হল কেউ বলছে - বেশ করেছে ঠিক হয়েছে। অন্য কেউ বলছে - আহা, বেচারা!
তার সাথে আছে রাজনৈতিক চাপান উতোর। রুলিং বলছে - এটা বিরোধীদের কাজ। আবার বিরোধী বলছে - এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
এবার, আমি কি জানি? আমি তো জানি লোকটার অনেক বেগড়বাই। সে তো সবাইয়ের থাকে। অনেক দাদা দিদিদের সঙ্গে যাতায়াত। সেও তো সবার থাকে। কিছু জনকে পাইয়ে দিত, ভাল। কিছু জনকে পাইয়ে দিবে বলে পাইয়ে দিতে পারে নি, নিশ্চয় খারাপ। নিজে কি পেত বা পেয়েছে তার কড়ায় গণ্ডায় হিসেব করে। এসব তো সবাই করে।
এরপর এই খুন পুলিশ ধর পাকড় ইত্যাদি দেখে আমিও বুঝতে পারি না ন্যায় কোনটা, অন্যায় কোনটা।  
এ তো একটা দিক। অন্যদিকে যে বা যারা জানে বা বুঝতে পারে, এটা অন্যায়। এটা ঠিক না। তাও সে বা তারা সেটা করে কেন? করতে বাধ্য হয় না কি স্বভাবগত কারনেণে।
দুটো ক্ষেত্রেই অনেক ভাবনার অবকাশ।
এবার যারা রুলিং তারা প্রথমে যাদের কেউ খুন হল তাদের ফ্যামিলির ওই  একমাত্র উপার্জনকারী সাজিয়ে ফ্যামিলির অন্য কোন মেম্বারকে একটা স্থায়ী ছোটখাটো পদের কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। অন্যদিকে যারা খুনী হিসেবে ধড়পাকড়ে ধরা পড়ল তাদের কিছু আইনি সাহায্য দিয়ে বা আইনকে আরো প্রলম্বিত করে অবস্থান বদলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। অর্থাৎ এই দুই পক্ষ আগে ডান বাম যে অবস্থানে থাক না কেন এখন অবশ্যই রুলিংয়ে চলে এল। এভাবে অন্যায় কি ন্যায় সে বিচারের কথা না ভেবে চলতে থাকা অবস্থানে যে যার পেশি বৃদ্ধি ঘটায়।
আবার আইন আইনের পথে চলে। আইন তো চোখ বাঁধা অন্ধ।  সে নথিপত্র বিচার করে সঠিক নির্ধারণ করে। আবার আইনকে কে নথি দেয়? আইনরক্ষক। তার নিজের পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু কে পরিচালনা করে? সবাই জানে। তাই সেই নথি আইনের কাছে যেমন পরিবেশিত হবে। বিচারও হবে তেমনি।  
ফলে কার কাছে কোথায় কিভাবে ন্যায় অন্যায় ভাল মন্দ জায়গা করছে তা আজকে দাঁড়িয়ে আদৌ বলা সম্ভব নয়।

এই অন্যায় ও অন্যায়ের প্রতিবাদ বড়ই বিচিত্র। প্রথমে জানতে হবে ন্যায় কোনটা অন্যায় কোনটা। ধরুন রাস্তা সারাইয়ে নিম্নমানের মাটি বালি স্টোনচিপস পিচ ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যায়। কিন্তু উন্নতমানের জন্য বাজেট দেওয়া হয়েছিল। তাহলে সেই টাকা গেল কোথায়? এবার এই কাজের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি, আমলা, অফিসার, ক্লার্ক, কন্ডাকটার, লেবার, যানবাহন, ক্লাব, ফড়ে, চুরি ইত্যাদি আছে। এই সংখ্যাটা খুব একটা কম নয়? এরা সবাই বলছে রাস্তা সারাইয়ে কোন অন্যায় হয় নি। তার মনে আমি যে নিম্নমান বলে চেঁচাচ্ছি সেটা ন্যায় কিভাবে প্রমাণিত বা প্রতিষ্ঠিত হবে?
আবার সবাই জানে এই কাজে কার কতটা পারসেণ্টেজ আছে বা থাকে। তাই সে ব্যাপারে কথা বলা বারণ। যাকে বলতে যাবে সেই বলবে - কোন মূর্খের রাজত্বে বাস কর ভাই? তাই কিছুজন সেই অবস্থানটুকু বা চেয়ারটুকু পাওয়ার জন্য যা নয় তাই করতে পারে। একেবারে শেষ সীমাতে পৌঁছতে তার হাত কাঁপবে না বা কাঁপে না। কেন না একবার সিস্টেমে ঢুকে গেলে বা চেয়ার পেয়ে গেলে পারসেণ্টেজ আসবেই। এটাই যে সিস্টেম। তাই যত অ্যালটম্যণ্ট ( Allotment) আনতে পারবে ততই লাভ। জন অবস্থানে বলতে পারবে - এই দেখো তোমাদের জন্য আমি করছি। এদ্দিন কেউ তোমাদের জন্য করে নি। আমি করেছি, আমিই করেছি।
আবার ঐ অবস্থানে যখন কিছু দৃষ্টিকটূ বা অন্য আবস্থান চোখে পড়ে, প্রকাশ্য এসে যায় তখন বলবে - আমি তো জানি না, দেখছি। যদিও সে দেখায় আবার অন্য গল্প।
তার মানে ভাল হলেই আমি করেছি অন্য কিছু হলে জানি না তো। দায়ভারের দৃষ্টি বদল।
আমি ছাড়া এই বিরাট সিস্টেম জাগ্রত করা বেশ ভাবনার। কেননা আমিও কোথাও না কোথাও ওই সিস্টেমের মধ্যে আছি। আমি ঠিক কতটা উপরের অবস্থানের বাইরে হতে পেরেছি যে লোককে বলব অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। মানি বা না মানি, চাই বা না চাই হাত তুলে হ্যাঁ বলতেই হয়। না বলা যেতে পারে কিন্তু তাতে অনেক হ্যাপা সহ্য করতে হয়। তাতেও রাজি আছি কিন্তু আমি যে না বলছি তার প্রাণপ্রতিষ্ঠা মাঠে মারা যায়।  
মঞ্চ বা ক্ষেত্র তৈরি না করে প্রতিবাদ করা মূর্খামি। নিজে সৎ থাকাটাই আয়না। জীবনের আয়না। জীবনকে চেনার আয়না। সেই আয়নায় মাঝে মাঝে নিজেকে দেখতে হয়। নিজের কুৎসিৎ নিজে দেখতে পেলে ভয়ে হোক বা ভক্তিতে হোক আরও হয়তো বেশি করে সৎ থাকা যায়।
তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার এই নিজস্ব সৎ আয়নায় সবাই বা অনেকেই আজ অথবা কাল বা কোন সুদূর একদিন প্রতিফলিত হবে।
তাই প্রতিবাদ যদি করতেই হয় সেই অবস্থান সম্পর্কে ভাল করে জেনে বুঝে এগিয়ে যেতে হয়। যারা সেটা করছে তাদের দিক থেকে বুঝে নিতে হবে, এই অন্যায় কেন তাদের স্পর্শ করছে না। তারা কি এই অবস্থানকে অন্যায় হিসেবে মানে? নাকি ন্যায়সঙ্গত ভাবে? কেন তারা অন্যায় জেনেও বার বার করছে। এসবই জানা বা বোঝা খুব দরকার। এই অন্যায় অবস্থানে কিছু জন থাকে, অনেকেই থাকে, গোষ্ঠী থাকে অথবা পরম্পরা থাকে।
এই সমস্ত কিছুর সাথে ওতপ্রোত অবস্থান পুরোপুরি ওয়াকিবহাল না হয়ে প্রতিবাদ অনেকটাই হাওয়াবাজি হয়ে যায়। তাতে হাওয়া নিজের দিকে ফিরে আসে। লাভ খুব একটা হয় না।
সতীদাহ প্রথা, বিধবা বিবাহ ইত্যাদি আমাদের সমাজ থেকে দূরীভূত করতে বিদ্যাসাগর বা রামমোহন সমাজের সাথে ওত্প্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল। তাতেই সাফল্য এসেছে।
সবদেশে এরকম অনেকের অবস্থান আছে, সবাই জানে অন্যায় কিন্তু বলা বারণ। যে বলবে সেই বিপদে পড়বে। আবার সেই অন্যায় যে মত হিসেবে বলছে সেও যে ন্যায়ের সঠিক তাও বোঝা দায়। কে ভুল কে ঠিক এই দ্বৈত সত্ত্বায় ন্যায় অন্যায় অনেকটা বলিপ্রদত্ত। মানুষের বুঝে উঠতে না উঠতে পেরিয়ে যায় সোনালী সময়। ফলে প্রতিবাদ ফিকে হয়ে আসে অথবা অবস্থান বদলে যায়।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৮২৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৪/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মোনালিসা ২৩/০৪/২০১৭
    অনেক অনেক ধন্যবাদ
  • বিপ্লব সিংহ ২১/০৪/২০১৭
    ভালো লাগল আপনার ভাবনা পড়ে।।
  • খায়রুল আহসান ১৯/০৪/২০১৭
    "দুটো ক্ষেত্রেই ভাবনার অনেক অবকাশ" - ঠিক তাই।
    তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সব সময়ই সমীচীন।
  • ভালোলাগা রেখে গেলাম।
  • মধু মঙ্গল সিনহা ১৯/০৪/২০১৭
    ভাল।
  • অভিজ্ঞতার দারুণ চমক!!!
 
Quantcast