www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলা কথা - ৩২

কোন রাজনৈতিক নয়
-------------------

যে কোন দেশ চালায় রাষ্ট্রনেতারা। সেই রাষ্ট্রনেতা রাষ্ট্র চালায় সরকারী কর্মচারীদের মাধ্যমে। প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা চাইবে নিজস্ব ক্ষমতা দখল করে রাখার জন্য যা ইচ্ছে খুশি শাসননীতি। সেই শাসননীতি পূর্ববর্তী আইন মোতাবেক অথবা নতুন তৈরি আইন মোতাবেক করতে হয়। এই আইন বা নীতি সরকারী আমলাদের দ্বারা কার্যকর করতে হয়।
সরকারী আমলা এবং অন্য সমস্ত শ্রেণির সরকারী কর্মচারী যদি আইন বা নীতির প্রতি সঠিক শ্রদ্ধাশীল হয় তাহলে জন প্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতার পক্ষে দুর্নীতি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে রাষ্ট্রনেতাদের পছন্দ হয় নি এমন আমলা বা সরকারী কর্মচারীকে সরিয়ে নিজের পছন্দমত আমলাদের বদলী করে নিয়ে আসেন। সেও কিন্ত সরকারী কর্মচারী।
নিজের পছন্দমত আমলা/সচিব/অফিসার দিয়ে রাষ্ট্রনেতা নিজের ক্ষমতা বাঁচানোর প্রক্রিয়া বা ক্ষমতা প্রয়োগের প্রক্রিয়া করেন।
এই বদলাবদলী করার জন্যও কিন্তু সরকারী কর্মচারীর(আমলা) প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ সরকারী কোন কার্যকলাপ কেবলমাত্র সরকারী কর্মচারীর দ্বারাই সম্পন্ন করতে হয়। কোন জনপ্রতিনিধির দ্বারা নয়।
যদি সমস্ত স্তরের সরকারী কর্মচারী বা বিশেষ করে আমলা/সচিব/অফিসার নীতি ও আইন মোতাবেক কাজ করেন এবং দৃঢ়চেতা দুর্নীতি মুক্ত থাকেন, যাকে বদলী করবেন বা কম্পালসারি ওয়েটিং-এ পাঠাবেন এবং যিনি তার বদলে আসবেন এবং যিনি এই প্রক্রিয়ার জন্য সই সাবুদ করবেন সবাই যদি 'ইয়েস বস' না হন তাহলে কোন সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত হতেই পারে না।
এক রাষ্ট্রনেতা কোন এক সরকারী জায়গায় নিজস্ব মনমানি করল। সেখানের সরকারী কর্মচারী তার প্রতিবাদ করল। সেই রাষ্ট্রনেতার তা ভাল লাগল না। সেই রাষ্ট্রনেতা প্রথমেই ওই কর্মচারীকে বদলী করতে চাইবেন কোন দূর প্রদেশে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেই কর্মচারীর বদলী করতে হলে অবশ্য আর এক ওই দপ্তরের ঊর্ধ্বতন (সচিব/আমলা/অফিসার) সরকারী কর্মচারীর সাহায্য নিতে হবে। অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন কর্মচারী বদলীর অর্ডার করবেন ওই রাষ্ট্রনেতার কথা শুনে। রাষ্ট্রনেতা নিজে কোন মতেই কিছু করতে পারবেন না।
ওই ঊর্ধ্বতন কর্মচারী (সচিব/আমলা/অফিসার) যদি রাষ্ট্রনেতাকে বাবু বাবু না করে, 'ইয়েস বস' না হয়ে একটু দৃঢ় মনোভাব দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী সম্বন্ধে জেনে বুঝে বদলীর অর্ডার করেন তাহলে সেই প্রতিবাদী কর্মচারী বা আইন মোতাবেক কাজ করা কর্মচারী নিজস্ব কাজ আরও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পারবেন। তার ইমিডিয়েট অথরিটি এবং বদলীর আদেশকারী যদি তাকে সহযোগিতা করেন। সেই কর্মচারীর যদি অন্যায় থাকে তাহলে তা অন্য কথা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা হয় না। বেশিরভাগ কর্মচারী শুধুমাত্র বদলীর ভয়ে রাজনৈতিক নেতাদের বা রাষ্ট্র পদাধিকার নেতার মনমানি মত কাজ করতে বাধ্য হয়। কেননা তার যেসব আপন সরকারী অফিসার ও আমলা সম্প্রদায় আছে তাঁরা তাকে সহযোগিতা করে না। বরং বাবু বাবু করা ইয়েস বস কর্মচারী শত অন্যায় করেও বিন্দাস বহাল তবিয়তে থাকে।
ফলে প্রায় সমস্ত কর্মচারী রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রনেতাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে আইনের ফাঁক গলে বিন্দাস কাজ করে যেতে বাধ্য হয়। ফলে কাজকর্ম সরকারী আদেশনামা বা আইন বা নীতির ফাঁক খুঁজে ফাঁক অনুযায়ী কার্যকরী হতে থাকে। ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রে সামাজিক ও সংস্কারী উন্নতির সুদূর প্রসারী অবস্থানের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
সরকারী যে সব টাকা বিভিন্ন খাতে দেওয়া হয় তা কখনই কোন জন প্রতিনিধি বা রাষ্ট্রনেতার নামে আসে না। কোন সরকারী আমলা ও অফিসারদের পদমর্যাদায় আসে। যদিও ব্যয় করার নির্দিষ্টকরণ করেন সেই সব জনপ্রতিনিধি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই টাকার ভাগ খুব সহজে রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রনেতার কাছে পৌঁছে যায়। ফলে সেখান থেকে দুর্নীতির সোপান শুরু হয়। এবং তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
এই দুর্নীতি রোধ করা যায়। যদি সমস্ত স্তরের সরকারী কর্মচারী পিয়ন থেকে শুরু করে সচিব আমলা অফিসার সবাই একজোটে দুর্নীতিহীন ও ঘুষহীন দৃঢ়চেতা হয়। দু একজন এ রকম দৃঢ়চেতা দুর্নীতিহীন ঘুষহীন হলে তাহলে তাঁর বা তাঁদের সমূহ বিপদ অবশ্যম্ভাবী।
তাহলে কি দাঁড়াল? কে দুর্নীতিগ্রস্ত? পড়াশুনা জানা সরকারী কর্মচারী না কি রাজনৈতিক নেতা ( তিনি শিক্ষিত কি না বিচার্য নয়)।
প্রতিটি দেশ পরিচালিত হয় কোন না কোন রাজনৈতিক বাতাবরণে। যে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতা পেলে তাকে ধরে রাখার জন্য তার মত করে দেশকে পরিচালিত করবে। এর মধ্যে দোষের কিছুই নেই।
কিন্তু সেই ক্ষমতাসীন দলটি নীতি, আইন, পদক্ষেপ কতটা সঠিকভাবে দেশের জনস্বার্থে পরিচালিত করছে তা দেখার দায়িত্ব স্থায়ী সরকারী কর্মচারীদের। পুলিশ প্রশাসন অর্থ শিক্ষা স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই।
এইসব আইন বিধান আদেশনামা ইত্যাদি নজরদারির ব্যাপারে সবার উপরে দায়িত্বশীল হতে হবে অফিসার, আমলা, পদাধিকার ও ইন চার্জদের।
এঁরা কোনোভাবে কোথাও দাঁড়িয়ে পড়লে পেছনের অফিসিয়েল কোনমতেই তা এভোয়েড করতে পারবে না। তাদেরকে আসতেই হবে। ভালো কাজের জন্য সবাই আছে।
সচিব, অফিসার, ইনচার্জ কখন আসে কখন যায়, কাজের কোন সুর্নিদিষ্ট নেই কিন্তু অন্য জনকে কাজের হুমকি দেয়, কাজের অন্য ধারা খোঁজে, তা বললে হবে না। কাজ দরকার। তা বলে এই নয় যে মাথার কোন খোঁজ থাকবে না।
আর ঘুষ কমিশন পারসেণ্টেজ কাটমানি ইত্যাদি সচিব আমলা, অফিসার ইন-চার্জদের একটা নির্দিষ্ট ক্রমান্বয়ে শুরু হয়ে একেবারে শেষে একশ দু'শতে পৌঁছায়। তাই এটা একটা পিরামিড।
এই পিরামিড ভাঙতে মাঝে মাঝে তদন্তের নামে নীচের থেকে দু একটা ইঁট পাথর ধরে টানাটানি হয়। তারপর যে কে সেই। ফলে দুর্নীতি ঘুষবাজি কমিশন পারসেণ্টেজ বহাল তবিয়তে বিরাজ করে।
এই যে রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি পার্ক উন্নয়ন ইত্যাদি কাজ হয় তার টেণ্ডার থেকে শুরু করে খরচের বহরে ১ টাকায় ঠিক কতটা কাজ হয় ভেবে দেখার দরকার।
এতে আবার সুবিধাও আছে। কোন এলাকায় রাজনৈতিক নেতারা পার্টির বা ভোটের কাজ করার জন্য টাকা পাচ্ছেন না। ঠিক আছে। ওখানে রাস্তা উন্নয়নের জন্য কয়েক কোটি সরকারী টাকা স্যাংশান করে দেওয়া হল। তার ফলে ১টাকার কিছু শতাংশ অনায়াসে রাজনৈতিক হাতে পৌঁছে গেল সরকারীভাবে এবং সরকারী কর্মীসকলের হাত দিয়ে।
যেমন দেখা যায় একেবারে ভোটের মুখে এ রকম কিছু রাস্তাঘাটের কাজ। তাহলে প্রক্রিয়াটি হল এমন যে সরকারী উপায়ে ভোটের আগে রুলিং পার্টির ভোট খরচ। আমরা ভাবি, যাই হোক ভোটের আগে তো কিছু কাজ হল।
এইজন্য আবার উল্টোটা দেখা যায়। যে এলাকায় রুলিং পার্টি নেই সেই এলাকায় উন্নয়নের টাকা পৌঁচছে না। তার কারণ কি? সেই এলাকার বিরোধীদের হাতে পুরো শতাংশ না হলেও কিছু শতাংশ পৌঁছে যাবে।
অথচ প্রতিটি স্টেপে যারা কাজ করেন তাদের মাইনে, মজুরি, কাঁচামাল ইত্যাদি সরকারী খাত অনুযায়ী পর্যাপ্ত বরাদ্ধ করাই থাকে। তাও কাজের ১টাকা থেকে অলিখিত ভাবে কিছু শতাংশ বাদ যায়।
সরকারী ব্যবস্থার এই পিরামিডকে নিয়ে অঙ্গুলি নাচন করতে রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রীরা ভালই শিখে গেছেন। তাই পরবর্তীতে তদন্তের নামে, অডিটের নামে, ইন্সপেকশনের নামে যেটুকু ইঁট পাথরের টুকরো ধরে টানাটানি হয় তাতে সরকারী শিক্ষিত কর্মচারীরা যাতে বহাল তবিয়তে পার পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করাই থাকে।
কেন না এই তদন্ত/অডিট/ইন্সপেকশন করে সরকার অর্থাৎ সরকারী কর্মচারী। তাই এই পিরামিড রাম রাজত্ব করতেই থাকে। থরে থরে ইঁট পাথর জমিয়ে বড় হতেই থাকে।
তাই যে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায়/সরকারে আসুক না কেন তার ডান বাম রহস্যে সরকারী কর্মচারী যথোপযুক্তভাবে প্রসরা সাজিয়ে রাখেন। তাই দেখবেন সরকার বদল হয় কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয় না। বরং সাধারণ মানুষের অবস্থা বা সার্বিক পরিস্থিতি দিন কে দিন আরো খারাপ হতে দেখা যায়।
ক্ষমতা পেলে যে কেউ চাইবে নিজের ফায়দা লুটে নিতে। রাজনৈতিক নেতা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরাও তো সাধারণ জনগণ। সার্বিক অবস্থার কথা দু একজন ভাবলেও অনেকেই ভাবে না। নিজের ফায়দা দেখবেই। যা রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সরকারী অবস্থানে এসে আরো বেশি করে পাওয়া যায়।
তার মানে উল্টোটাই হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রী স্বচ্ছ থাকতে চাইলেও থাকতে পারে না। বা ভাল করে বললে সরকারী কর্মচারী থাকতে দেয় না।
যে দেশে, যে রাজ্যে, যে পঞ্চায়েতে সবাই না হলেও যদি বেশিরভাগ সরকারী কর্মচারী সৎ সাবলীল হয় সেই দেশ বা সেই রাজ্য অনেকবেশি উন্নতি করতে পারবে।
দু একজন সরকারী কর্মী সৎ সাবলীল হলে চলবে না। তাতে আরো বেশি বিপত্তি। তাও যদি সচিব/আমলা/অফিসার এই পর্যায়ে হয় তাহলেও রেহাই পায় কিন্তু তার নীচে বি সি শ্রেণির কর্মচারীর যদি এক আধজন এমন হয়ে যায় তাহলে আরো মহা মুশকিল। তাই সবাইকে হতে হবে।
উপরে যেমন বলেছি সরকারী ব্যবস্থা জানেন অনিয়মটাই নিয়ম। তেমনি সৎ সাবলীল অবস্থানকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে সকলে ভাববে শিখবে সৎ সাবলীল থাকাটাই নিয়ম।
না হলে সার্বিক উন্নতি বা উন্নয়ন কিছু কিছু উপলব্ধ হবে কিন্তু সার্বজনীন হবে না।
এই যে অনুপ্রবেশ হয়, কিভাবে? সন্ত্রাসবাদীরা জঙ্গলে গুহায় নিরাশ্রয়ে থেকে খায় দায়, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পেয়ে যায়, কিভাবে? প্রতিটি দেশের চারিদিকে সুরক্ষায় বজ্র আঁটুনি থাকে। তাও কাঁটা তার পেরিয়ে বিন্দাস এপাশ ওপাশ হচ্ছে। কি করে? কারা থাকে এই সুরক্ষায়? সরকারী কর্মচারী।
অত্যাধুনিক অস্ত্র জঙ্গলে বসে বা গুহায় লুকিয়ে বানানো সম্ভব নয়। টাকা পয়সার সাথে সাথে কাঁচা মাল কোথায় পায় এই সন্ত্রাসবাদীরা। আসলে এই অত্যাধুনিক অস্ত্র সরকারী কোষাগার ছাড়া আদৌও বানানো সম্ভব নয়। কিন্তু হাত বদলে সেই সব চলে যায় সন্ত্রাসবাদীদের হাতে। কিভাবে? সরকারী বাবুদের হাত ঘুরে।
তাহলে সৎ সরকারী কর্মচারী সর্বত্র প্রয়োজন। সৎ সরকারী কর্মচারী একটি দেশের একটি রাষ্ট্রের একটি রাজ্যের একটি পঞ্চায়েতের প্রয়োজন।
সৎ কর্মচারীর দ্বারা সরকারী কোষাগার সুরক্ষিত থাকবে, দেশ সুরক্ষিত থাকবে, আদর্শ দেশ গড়ে উঠবে, শিক্ষা স্বাস্থ্যে শাসনে উজ্জীবিত হয়ে উঠবে, সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হবে, নাগরিকের মনে একপেশে ভাবনা দূর হবে, সমস্ত নাগরিক সমান সুযোগ পাবে, আইনের মর্যাদা হবে, কোন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ইচ্ছে খুশি করতে পারবে না। আরো কত কি?
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৯৫১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ভালো লেখা। অনেক শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন।
  • valo
 
Quantcast