www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রেমের জোয়ারে

“প্রেমের জোয়ারে  “ অপ্সরা –সুনন্দা, উর্বশী- সম্পা...ঋত্বিক- অসিত            
রচনা:-
(গভীর রাতে মুঠো ফোন বেজে ওঠে বুকটা অজানা আশঙ্কায় বুকটা ধক ধক করে উঠলো । ফোনটা ধরে ফেললাম।হালো... হালো... অপর প্রান্তে নারীর সুরেলা কন্ঠে...........অবাক হলাম.....)
নারী :- ( কনকনে ঠান্ডা গলায়) হ্যালো হ্যালো ফোনটা রাখবেন না। নাম জানতেও চাইবেন না। উহু ফোন রাখবেন না।আমার তিনটে শর্ত আছে ।এক ইচ্ছা হলে ফোনটা রেখে দিতে পারেন । দুই আমার সাথে সারারাত গল্প করতে হবে। তিন অকথ্য গালাগালিও দিতে পারেন । ফোনটা কেটে দিলেও আমি আবার ফোন করব  । ফোন বন্ধ করে ফেললে অবশ্য সেটা হবেনা । তখন অন্য কাওকে চেষ্টা করব।আসলে ঘুম আসছে না । আসবেও না । চুপচাপ জেগে থাকলে একটা নেশা চেপে ধরে । সেটা মৃত্যুর নেশা । আত্মহনন করতে ইচ্ছা হয়। আপনি যদি কথা বলেন তবে আমি আজকের দিনের জন্য হয়ত বেঁচে যাব । আর একটা কথা আপনাকে যদি ভালো লাগে তাহলে রোজ রাতে ফোন করব ।কি কথা বলবেন?
ঋত্বিক: যদি ভালো লাগে রোজ রাতে ফোন...মৃত্যুর নেশা  ।আত্মহনন...এখন ঘড়িতে দুটো বাজে, আপনি অজানা অচেনা এক নারী...(মনে মনে ভাবে)কি করা উচিত কথা বলব না বলব  না।
নারী :- চুপ কেন? কথা বলুন বলছেন না কেন? একটু কথা বলে মানুষ কে সাহায্য করতে পারেন না? তাহলে আপনি কিসের মানুষ? আমি বাঁচবার জন্য হাত বাড়াচ্ছি। আপনি আমার হাত ধরবেন না? যখন আমি ভীষন একলা হয়ে পড়ি । তখন আমার মরতে ইচ্ছা করে ।  কি হল কথা বলুন। শুধু আমিই বলব  ।
ঋত্বিক: (হকচকিয়ে) হা হা বলছি বলছি কথা বলছি  । কিন্ত কি বলব? ঠিক বুঝে উঠতে পাছিনা  ।
নারী :- যা খুশি তাই বলুন... আপনার ছোটবেলা, বড়বেলা, কোনদিন যে কথা কাউকে বলেননি সেকথা  । কোনো ইচ্ছের কথা, কোনো স্বপ্নের কথা, বা কারোর সাথে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন সেই কথা  ।  ভালবাসার জন্য কাউকে পেযেছেন......জগতে কত কথা আছে আর আপনি কথা খুঁজে পাচ্ছেন না...(হাসি)...এমন এক নারীর বাসনা পূর্ণ করতে..পারছেন না ...
ঋত্বিক:- (থামিয়ে দিয়ে) নারীর বাসনা দাঁড়ান...দাঁড়ান....অনেকক্ষন থেকে শুনছি পাগলের প্রলাপ  । কি ভেবেছেন (২) আপনার নাম জানিনা ধাম জানিনা আপনার সাথে কথা বলতে যাব কেন?(উত্তেজিত) আবার আত্মহত্যার ভয় দেখাচ্ছেন । বলব না..মহিলা হলেই কি তার সব আবদার মেনে নিতে হবে  ।  
নারী :- (গম্ভীর) আমি পাগল নয়, আপনি রেগে গেছেন । বেশ বুঝতে পারছি রেগে লাল হয়ে গেছেন ।যা খুশি একটা নাম দিতেই পারেন!(হাসি) আপনার গলাটা বেশ...রেগে গেলেও বেশ সুরে সুরে তালে তালে শুনতে বেশ সুন্দর লাগছে । আপনার সাথে রোজ রোজ কথা বলা যায় । আচ্ছা আপনি কি গান করেন? আমাকে শেখাবেন , আমি ও গান জানি, শুনবেন... “এসো এসো আমার ঘরে আমার ঘরে, বাহির হয়ে এস তুমি যে আছো অন্তরে এসো..আমার ঘরে”
ঋত্বিক:- (চমকে যায়) হ্যালো (৩) যা ফোনটা কেটে গেল। ভালোই গায়ছিল । গলাটা খুব সুন্দর.....“এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে, আচ্ছা আমি যে গান জানি, গান শেখাই কি করে জানলো? ঠিক আছে (২) এই নাম্বারে ফোন করে দেখি না । আরে এই নাম্বারের তো কোনো অস্তিত্ব নেই  ।(দীর্ঘ শ্বাস) দূর এত রাতে আর চিন্তা করতে ভালো লাগছে না । ফোনটা কেটে গিয়ে ভালোয় হলো...কাল সকালে অনেক কাজ এখন ঘুমিয়ে পড়ি। যদি তার ভালো লাগে সে আবার ফোনটা করবে!
তিনরাত চলে ফোনে আলাপন হাসি গান গল্প আর আড্ডা একদিন সন্ধ্যায় ঋত্বিক গান শেখাতে যায় উর্বশীর বাড়ি  ।বেল বাজাতেই দরজা খুলে যায় ।
ঋত্বিক:- কি ব্যাপার এখনো গানে বসোনি... হারমোনিয়ম কোথায়? আগের দিনে গানটা প্রাকটিস করতে বলেছিলাম । করনি নিস্চয় ।এইভাবে আমি গান শেখাতে পারবনা  বাবা মাকে ডাক ...। বল যে আমি ডাকছি ।
উর্বশী:- প্রাকটিস করেছি  (২) আপনার আসতে দেরী দেখে.... ভাবলাম আপনি আসবেন না... তাই তুলে রেখেছি  । (ন্যাকা) আপনি আমাকে বকছেন কেন?(কান্নার ভান করে) জানেন বাড়িতে বাবা মা নেই  । এই রকম বকলে আমি কিন্ত কেঁদে ফেলবো... আমার কান্না আসছে  । হু হু হু হু
ঋত্বিক:- যা বাবা আমি আবার কোথায় বকলাম  । আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে এখন গানে বসো... আগের দিন জানি কোন গানটা ছিল । নাও শুরু করো  ।  দেখি কেমন তৈরী হয়েছে...।
উর্বশী:- “সখী ভাবনা কাহারে বলে.....সখী যাতনা কাহারে বলে....তোমরা যে বল দিবস রজনী ভালবাসা...ভালবাসি ... সখী..উর্বশী সুরে শব্দে ভুল করে ঋত্বিক শুরুতেই গান থামিয়ে দিয়ে)
ঋত্বিক:- একি উর্বশী তুমি তো ভুল গান করছ। সুরে গলা লাগছে না আর শব্দ সুর সব ভুল.ভুল ভুল  
উর্বশী:- কখনো নয়, আমি ঠিক গান করছি । সুর শব্দ সব ঠিক আছে  । বলছিতো... আমি তোমাকে ভালবাসি.....গীতবিতানে তাই আছে......আমি নিজে দেখেছি...।

আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত

ঋত্বিক:-(একটু হেসে) তাই আছে..বেশ বেশ গীতবিতানটা কোথায়?নিয়ে এসোতো একবার দেখি ।
উর্বশী:- এইতো এইখানে ছিল… কোথায় গেল? তাহলে পাশের ঘরে হয়তো আছে । নিয়ে আনছি ।
ঋত্বিক:- (একলা বসে থাকে), ছবিটাতো এখানে ছিলনা... একজন উর্বশী অন্যজন কে? অসম্ভব সুন্দরী । উর্বশী আসুক ওকে জিজ্ঞাসা করব (ঠিক তখনই গান শুনতে পায়) “আমার চোখেতো সকলই শোভন সকলি নবীন সকলি বিমল সুনীল আকাশ '' (হটাত গান থেমে যায়, উর্বশী আসে )
উর্বশী:- এই যে স্যার গীতবিতান । দেখুন না এখানে পাতাটা ছেঁড়া.....কি হবে স্যার । একটু আগে তো সব ঠিক ছিল... আমি কিছু বুঝতে পারছিনা স্যার স্যার (কাঁদতে শুরু করে)
ঋত্বিক:- আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে ঠিক আছে। এই ছবিটা...।এই ছবিটাতো এখানে ছিলনা! একটাতো তুমি অন্যজন কে? বেশ সুন্দরী ওকি তোমার কেউ হয়?
উর্বশী:- (হেসে ) ঠিক ধরেছেন স্যার ওটা আমি। আমাকে ভালো লাগছেনা? আর পাশে যে আছে সে আমার.......(কথা শেষ হয়না, খট খট আওয়াজ)
অপ্সরা:- (পর্দার ওপ্রান্ত থেকে) চা তৈরী হয়ে গেছে....গরম গরম খেয়ে নাও.....ভালো লাগবে।
উর্বশী:- আমি আসছি তোমাকে আর আসতে হবেনা......যেখানে আছ সেখানেই থাকো.....(চা নিয়ে আসে) এই নিন স্যার আপনার গরম গরম চা...আমি বানিয়েছি...।
ঋত্বিক:- (চা খেতে খেতে ) দারুন চা বানিয়েছতো। আগে কখনো খাইনি মানে তুমি বলেছিলে চা বানাতে পারনা। আচ্ছা এবার বলতো ভেতরে কে গান করছিল? সুন্দর গান..গায়ছিল..
উর্বশী:- (আমতা আমতা করে ) গান গান ও ও আ আ আমি করছিলাম। চা.. চা বানাতে বানাতে ....কেন স্যার? চা ভালো হয়নি। আবার করে দেব....
ঋত্বিক:- না না ঠিক আছে। সুন্দর...দারুন...চা হয়েছে। গানটাও একবারে ঠিকই ছিল ঠিক গরম চায়ের মত। কিন্ত তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম... কই বললেনা তোমার পাশের ছবিটা কার?
উর্বশী:- ( এড়িয়ে যায়) ও স্যার সামনে পঁচিশে বৈশাখ একটা নতুন গান তুলিয়ে দিন না। কলেজে গান করতে হবে। ঐ যে কি যেন গানটা হা “দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে”
ঋত্বিক:- ( দুজনে গান শুরু করে) আচ্ছা বেশ কর “দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে” (হাত দিয়ে গান থামায়, গান শোনা যায় ভেতর থেকে) “ তোমার সাথে গানের খেলা দুরের খেলা যে,বেদনাতে বাঁশি বাজে সকল বেলা যে কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসি...(হ্টাত উর্বশী বলে – একটু দাঁড়ান স্যার (ছুটে যায় ঘরে সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় গান,ফিরে আসে)

উর্বশী:- (বোঝানোর চেষ্টা) ঘরে টেপ চলছিল বন্ধ করে দিয়ে এসেছি... নিন স্যার গান শেখান আমি পুরো গানটা আজই তুলে নেব ..
ঋত্বিক:- (গম্ভীর) উর্বশী বার বার মিথ্যা কথা বলছ কেন? ছবিটা কার? কে গান করছিল? আমার এতগুলো প্রশ্নের জবাব তুমি দেবেনা?
উর্বশী:- (কপাল কুঁচকে) কেন স্যার! আপনি আমাকে গান শেখাচ্ছেন, গান শেখান..অত কথার উত্তর দিতে আমি পারবনা।যদি একান্ত শুনতে চান পরে বলব।
ঋত্বিক:- শোন উর্বশী যেখানে এত মিথ্যা সেখানে ঋত্বিক মুখার্জী থাকে না, আমি চলে যাচ্ছি।
উর্বশী:- না স্যার আপনি চলে যেতে পারেন না... আমি আপনাকে.....আপনাকে ....... কিছুতেই যেতে দেবনা। (গম্ভীর হয়) ঐ ছবিতে আমি আর আমার ......... (গান ভেসে আসে ) “এসো এসো আমার ঘরে আমার ঘরে, বাহির হয়ে এস তুমি যে আছো অন্তরে এসো......আমার ঘরে.
ঋত্বিক:- এইতো সেই গান। এই গলা আমার চেনা খুব চেনা কোথায় শনেছি(২)মনে করতে পারছিনা...পারছিনা.. কে ও .কে ও বল উর্বশী বল। আমাকে আর অন্ধকারে রেখোনা। আমকে জানতে দাও। বল ও কে? আমি ওকে চিনতে চাই, জানতে চাই। আমি একান্ত করে কাছে রাখতে চাই।
উর্বশী:- (রেগে যায়)কি বলছেন আপনি। ও আমার দিদি অপ্সরা। একান্ত করে কাছে রাখতে চান মানে সেটা আপনি কখনো পারবেনা। উনি একটা বদ্ধ পাগল। সেটা কখনোই সম্ভব নয়।
ঋত্বিক:- কেন সম্ভব নয়!(২) চেনা গান চেনা গলা। রোজ রাতে উনিই আমাকে ফোন করেন। তখনতো আমি কোনো পাগলামির লক্ষণ দেখিনি । খুব ভালো গান করতে পারেন। ভালো কথা বলেন। আমি ওনার সাথে দেখা করতে চাই. চাই চাই. চাই..তুমি দেখা করতে দেবে না দেবেনা? কেন দেবেনা?
উর্বশী:- (দুহাত বাড়িয়ে ) না....কিছুতেই দেখা করতে দেবনা।আমার দিদি অপ্সরা ও মানসিক রোগী । আপনি আপনার কথা এখনি ফিরিয়ে নিন। আমি যে মনে মনে আপনাকে ভা ভালবাসি.. ..ভালবাসি (বলতে বলতে কেঁদে ফেলে)
ঋত্বিক:- ভালোবাসো আমাকে.... আমিতো সেটা কখনো বুঝিনি।আমি বিশ্বাস করিনা। আমি তোমায়....ভালোবাসিনা..... (ঠিক তখন ভেতর থেকে গান ভেসে আসে “দুরে কোথায় দুরে দুরে আমার মন বেড়াই গো ঘুরে ঘুরে ”)
ঋত্বিক:-(উন্মাদের মতো)আমাকে ভেতরে যেতেই হবে, আমি মনে মনে ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমি যাব আমি যাব
উর্বশী:- (শেষ চেস্টা কাঁদতে কাঁদতে) না... না স্যার। আমার দিদিকে দেখলে আপনি কষ্ট পাবেন ভয় পাবেন । (ঋত্বিক:- কেন ? কেন?) আমার দিদির মুখটা ASID দিয়ে কেউ পুড়িয়ে দিযেছে.. ভালোবাসা প্রত্যাখান করেছিল বলে। তখন থেকে আমার দিদি কাওকে মুখ দেখায় না। দীর্ঘ দিন চিকিত্সা চলেছিল বেঙ্গালুরুতে। এই এক সপ্তাহ হল বাড়ি ফিরেছে। দয়া করে আপনি ভেতরে যাবেন না।
ঋত্বিক:- (উচ্ছসিত)আমি যাবই.. আমি আসছি অপ্সরা। অপ্সরা অপ্সরা অপ্সরা ওরা তোমার মন চিনতে পারেনি আমি চিনেছি তাই...আমাকে যেতেই হবে কেউ আটকাতে পারবেনা। যতই ঝড় উঠুক তুফান উঠুক আমি তোমার কাছে যাব...আমি তোমার হাত ধরব। আমি আসছি অপ্সরা...ঋত্বিক ভেতরে যেতেই
‘’ তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম॥
মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম॥
জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি, তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি।
মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম॥
(সমাপ্ত)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৯২৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/০৪/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর হয়েছে।
  • সাইদুর রহমান ২১/০৪/২০১৫
    খুব ভালো লাগলো গল্পটী।
    অনেক শুভেচ্ছা।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ২১/০৪/২০১৫
    নাইস
  • ভাল লাগা রেখে গেলাম কবি !
 
Quantcast