www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রিয় তোশিকো

[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে জাপানি লেখিকা তেশিকো তাকাগি'র স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ 'গারাসুনো উসাগি' (কাঁচের খরগোশ) পাঠান্তে।]

তোশিকো মনে কতো না কষ্ট জমেছিল তোমার
যুদ্ধের আগুনে পুরে ছারখার তোমাদের
ছোট্ট সুখের ঘর সাজানো সংসার
সব সুন্দরকে সড়িয়ে আজ চারপাশে শুধু
একদল মানুষরূপী পিশাচের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
ওরা শুধু রক্ত চায়; লাল লাল তাজা রক্ত।
সেই রক্তের জন্য আজ আগুন চারিদিকে
সর্বত্র আতঙ্ক, সীমাহীন উৎকণ্ঠা
এক অনিশ্চিত গন্তব্যে চলেছে অসহায় মানুষগুলো
ভীষণ দুর্গম, কণ্টকাকীর্ণ পথে
কেউ জানে না কোথায় এঅনিশ্চিত যাত্রার শেষ
শান্তির জন্য আর কতদূর যেতে হবে
কোথায় মিলবে মুক্তি!
থেকে থেকে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে,
মুহুর্মুহু বিকট বিস্ফোরণ সমরাস্ত্রের।
বারুদের গন্ধভরা একেকেটি নষ্ট অভিশপ্ত দিন যেন
যুগের পর যুগ পিছিয়ে নিয়ে চলেছে তোমাদের।
যেখানে চোখ যায় শুধু ধংসস্তুপ
বিঁষাক্ত কাল ধোয়ায় ঢাকা আকাশ
যত্রতত্র ছড়ানো তাজা লাল রক্ত
আহত অর্ধমৃত মানুষের বিকট চিৎকার
আহা তবুও বাঁচার কী তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাদের
কিন্তু কেউ একবার ফিরেও তাকাচ্ছে না সেদিকে,
সবাই যে যার মতো প্রাণভয়ে ছুটছে দিক্বিদিক
এখানে ওখানে পড়ে আছে গলিত পচা লাশ
মানুষ জানোয়ার সব মিলেমিশে একাকার
স্বজনের ক্রন্দন আর্তনাদ আর বুকফাঁটা বিলাপে
থেকে থেকে প্রকম্পিত হয় আকাশ, মর্ত।
একে কি জীবন বলে তোশিকো, বেঁচে থাকা
এরচেয়ে তো মৃত্যুই ঢের ভাল!

তোশিকো একাকী অপেক্ষার মুহূর্তগুলো খুব কষ্টের
ওরা শুধু পারে আগুনে পোড়াতে
বেদনার অথৈ নীল সাগরে ভাসাতে,
পারে না দেখাতে কোনও স্বপ্ন
কোনও আশার সঞ্চার ঘটাতে বুকে।
একজন সঙ্গির দারুণ প্রয়োজন এসময়
এমনকি যদি মূক বা বধিরও হয় সে
তাও তো চোখে চোখ রেখে ইশারায় কথা বলে
কিংবা শুধু পাশাপাশি বসেও দিব্যি কেটে যায় বেলা
কষ্টের গুমোট নীল একাকীত্বের থেকে সেও অনেক ভাল।
তাই কানে কানে বলি শোনো একাকী থেক না আর
তুমি মা'র কাছে যাও আরেকবার।
এবার মা তোমাকে ঠিক বুকে জড়িয়ে নিবে
স্বস্নেহে মাথায় বুলিয়ে দিবে অমল হাত
শোনাবে মধুর কোনও ঘুমপাড়ানিয়া গান,
হয়তো ঘুমিয়েও পড়বে তুমি নিশ্চিন্তে।
মা জানে মা বোঝে এখন খুব একা তুমি
তোমার চাই একটু আদর একটু গল্পের আসর।
তবে দোহাই তোমার বাবার কাছে তুমি যেয়ো না
বাবার মন আজ একটুও ভাল নেই
চারপাশে এতো এতো শোক, এতো যন্ত্রণা
দুঃস্বপ্নে ভরা একেকটি নষ্ট অভিশপ্ত দিন
এসবের মাঝে কী করে ভাল থাকা যায় বলো
বাবা যে কাণ্ডারি এজাহাজের।
আর তুমি দেখ, কী প্রচণ্ড ঝরের সময় এখন
মাঝ সমুদ্রে তোমাদের জাহাজ ভাসছে টালমাটাল
যে কোনও সময় একটা দমকা হাওয়া এসে
মুহূর্তেই সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে
নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে সব স্বপ্ন আশা।
না তুমি বাবার কাছে যেয়ো না
বাবা আজ বড্ড ক্লান্ত
বাবাকে একা থাকতে দাও।
যদি পার তবে বড় ভাই ইউকিয়োকে
হাসিমুখে বিদায় জানিয়ো
আর ভগবান বুদ্ধের কাছে করজোড়ে প্রার্থনা কর
ও যেন যুদ্ধ জয় করে বীরবেশে ফিরে আসে
তোমাদের মাঝে, মায়ের শূন্য কোলে।
আহা মা'র হৃদয়ে কী ভীষণ রক্তক্ষরণ
সন্তান হারানোর শঙ্কায় দুরুদুরু কাঁপছে বুক
আর কতোটা যে তীব্র এর যন্ত্রণাভার,
তা কেবল একজন মা-ই জানে, আর কেউ না।

তোশিকো যুদ্ধ একদিন ঠিক থেমে যাবে
আবার বিস্তীর্ণ নীলাকাশে উড়বে পাখির ঝাক
ফুল ফুটবে, পাখিরা গাইবে গান
ফুলে ফুলে গুঞ্জরিত হবে ভ্রমর পরম সুখে
আবার সতেজ লাল রোদ্দুরে স্নাত হবে তোমাদের দিন
এশুভ প্রত্যাশায় আজ আমিও একটি সান্ধপ্রদীপ
জ্বালবো, আমার জীর্ণ কুটিরে
করজোড়ে নতজানু হয়ে দাঁড়াব প্রার্থনায়,
হে ঈশ্বর হে পরম পিতা ভগবান বুদ্ধ
যে তুমি দাঁড়িয়ে আছ অন্তরীক্ষে
সতত হাসছ এইসব অর্বাচীন স্থূল বুদ্ধির
দু'পেয়ে জন্তুদের উদ্ভট সব কার্যকলাপ দেখে।
অনেক হয়েছে এবার যুূদ্ধ থামাও তুমি
এযুদ্ধ তোমাকে থামাতেই হবে
কারণ তুমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে।
আমরা শান্তি চাই প্রভু
আমাদের শান্তি দাও।
#
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ৪৩৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৬/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast