www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সারপ্রাইজ

আজ ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখ , এমনি এক দিনে অভ্র ও তৃষার বিয়ে হয়েছিল। তৃষা সকাল থেকে অপেক্ষা করে আছে কখন অভ্র তাকে উইশ করবে। কিন্তু অভ্র সকাল থেকেই অফিস যাওয়ার জন্য খুব ব্যস্ত । এই তৃষা কি হল আমার জামা টা দাও অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে যে। এই নাও সব সময় কেবল কাজ আর অফিস, এই আজ না গেলে হয় না। কেন গো আজ কি? না কিছু না এমনি বলছিলাম। আরে আজ বস বিদেশ থেকে অফিস ফিরছে আজ যেতেই হবে। এতক্ষণ রান্না ঘরে কি করছিলে? পরটা বানাচ্ছিলাম । কেন পরটা কেন ? এইরে এবার তৃষা কি বলবে , তারাতারি সামলে নিয়ে বলে না কালকের ময়দা বেঁচে গিয়েছিল তাই । এই শুনছ তোমাকে তো বলতে ভুলেই গেছি আজ মল্লিকা ও অর্ণবের বিবাহ বার্ষিকী ওরা আমাদের ইনভাইট করেছে , কিম লিং এ পার্টি দেবে। আমি অফিস ফেরতা চায়না টাউন এর মুখে দাঁড়াব তুমি আটটা নাগাদ পৌঁছে যেও।
অভ্র অফিস চলে যায়। তৃষার খুব রাগ হয়। দেখ মল্লিকার বিবাহ বার্ষিকীর কথা শুনেও মনে পড়ল না আজ তাদের অ বিবাহ বার্ষিকী । যাইহোক মল্লিকার বিবাহ বার্ষিকী ই সেলিব্রেট করবে। হঠাৎ তৃষার মনে পড়ে গেল ওদের জন্য গিফট তো কেনা হল না। কিন্তু কি কিনবে ! তারাতারি ফোন করে অভ্রকে । কয়েক দিন আগেই একটি ভাল কস্টিউম জুয়েলারি পছন্দ করেছিল তৃষা, কিন্তু মাসের শেষ হওয়ায় কিনে দিতে পারেনি অভ্র। অভ্র তৃষা কে বলে সে দিন মলে যে নেকলেস টা সে দেখেছিলে সেটা দিলে কেমন হয়? আরও রেগে যায় তৃষা। হ্যাঁ এতোদিন ওটা পড়ে আছে। আরে দেখই না , যদি থাকে তাহলে ওরকম একটা কিছু কিনে নিও।
দুপুরের খাওয়া সেরে, বেডরুমে চলে যায় তৃষা। একটু জিরিয়ে নিয়ে ৫টা ৫.৩০টা নাগাদ যাবে মলে। আজ একটা লাল কালো শাড়ি পড়েছে তৃষা আর খুব মার্জিত সাজগোজ করেছে। এই শাড়িটা অভ্র র ভীষণ প্রিয়। অবশ্য তৃষা কেও শাড়িটাতে ভালই মানায়। ফর্সা গায়ের রঙ। ডানা কাটা পরী না হলেও বেশ সুন্দর দেখতে তৃষা কে। যখন সে কলেজে ভর্তি হয় কম ছেলে তার প্রেমে পড়েছে। তবে তৃষা কাউকেই পাত্তা দেয়নি, কিন্তু জয়ন্ত কে তার ভালো লেগে যায়। খুব ভাল ছবি আঁকত জয়ন্ত । দেখতে শুনতেও বেশ ভালো ছিল। জয়ন্তর সাথে তৃষার বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়। তৃষা জয়ন্তকে প্রায়ই বলে তার একটা তেল রঙের পোট্রেট আঁকতে, যদিও জয়ন্ত তৃষার অনেক গুলো পেন্সিল স্কেচ করেছে। কিন্তু তৃষা বায়না করে তার একটা রঙিন পোট্রেট আঁকতে, কিন্তু তেল রঙের ছবি আঁকতে গেলে অনেক সরঞ্জাম লাগে তা যেখানে সেখানে আঁকা সম্ভব নয়। তৃষাকে একদিন তার বাড়িতে আসতে বলে জয়ন্ত। তৃষা একটা সুন্দর শাড়ি পড়ে জয়ন্তর বাড়িতে যায় । জয়ন্ত তৃষা কে একটা সোফায় বসতে বলে ছবি আকার সব সরঞ্জাম রেডি করে।
সোফায় তৃষাকে একটু বিশেষ ভঙ্গিমায় শুতে বলে জয়ন্ত । একি তৃষা শাড়িটা কিভাবে পরেছ তৃষা ? মনে হচ্ছে মন্দিরে পুজো দিতে এসেছ। জয়ন্ত নিজেই তৃষার শাড়িটা ঠিক করতে যায় , শিল্পির হাত কে বাধা দিতে পারেনা তৃষা । হঠাৎ দুজনে একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে তা বেশি দূর না গড়ালেও সেই ঘটনার কথা ও জয়ন্তর সাথে তৃষার প্রেমের কথা কিছুই জানে না অভ্র। জয়ন্ত স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশ চলে যায় , আর সেখান থেকে তৃষার সাথে খুব একটা যোগাযোগ করেনা। যেহেতু তৃষার বাবা মা ব্যাপারটা জানত না তাই তারা ছেলে দেখতে শুরু করে, অভ্র একটা এম এন সি তে কাজ করে ভালা পরিবার । তৃষা ও রাজি হয়ে যায়। তৃষা ইচ্ছা করেই অভ্র কে কিছু বলেনি। একটা কম বয়সের দুর্বল মুহূর্ত ছাড়া সেটা আর কিছুই তো নয়, শুধু শুধু এই কথা বললে তার বিবাহিত জীবন টা দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। তৃষা জানে অভ্র তাকে খুব ভালোবাসে , কিন্তু এই দিনটার কথা কি করে যে সে ভুলে গেল কে জানে। তৃষা মলের দিকে রওনা দেয়, মলে পৌঁছে সোজা চলে যায় জুয়েলারি ডিপার্টমেন্টের দিকে । দূর থেকেই তৃষার নজরে পড়ে যায়, কি আশ্চর্য নেকলেস টা যেমন ছিল তেমনই আছে। কাছে গিয়ে নেকলেসটাতে হাত দিতে যাবে এমন সময় একটি পুরুষের হাত এসে পড়ে ওটার ওপর , দুজন দুজনকে চিনতে পারে । একি তুমি কবে দেশে ফিরলে। এইত একমাস হল। বিয়ে করেছ ? হ্যাঁ বিয়ের জন্যই তো দেশে আসা। ও কনগ্র্যাচুলেশন, ভালই আছ তাহলে, কেন তুমি ভালো নেই। হ্যাঁ আমিও ভালই আছি । আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী , ও বিশেষ কাজে অফিস চলে গেছে তাই আমাকে আমার পছন্দ মত গিফট কিনে নিতে বলেছে । এই নেকলেস টা... আমায় ভাল লাগবেনা , কি বল। নিশ্চয়, হ্যাপি অ্যানিভারসারি। তৃষা মুচকি হেসে থ্যাংকস জানায় । ওদের মধ্যে আরও কিছু কথা হয়। পুরানো দিনের অনেক কথার মাঝে সেই দিনের কথা আবার চলে আসে। জয়ন্ত জিজ্ঞেস করে তুমি তোমার হাসবেন্ড কে সব বলছ? তুমি বলেছ নাকি তোমার স্ত্রী কে? না বলতে হয়নি আমার আঁকার ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক ছবির মাঝে তোমার ঐ পোট্রেট টা ওর চোখে পড়ে যায় , একটা মেয়ের খোলামেলা ছবি দেখে ও কিছুটা আন্দাজ করে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল। আমি বলেছি আমার মন থেকে আঁকাছবি। হঠাৎ তৃষার মোবাইল টা বেজে ওঠে , কি হল তুমি কোথায় আমি ১৫ মিনিট হল চায়না টাউনের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই মলে আসতে দেরি হয়ে গেছে , একটু অপেক্ষা কর আমি আধঘণ্টায় পৌঁছচ্ছি। এবার উঠতে হবে । তোমার নাম্বারটা ,ওটায় তোমার আর দরকার নেই। কলকাতায় আসলে তোমার সাথে দেখা করতাম। পৃথিবীটা খুব ছোট আবার হয়তো এরকম ভাবেই দেখা হয়ে যাবে, চলি।
তাড়াতাড়ি একটা ট্যাক্সি ধরে চায়না টাউনের মোড়ে পৌছয় তৃষা, অভ্র তার জন্য দাঁড়িয়ে আছে , তারা একটা রিক্সা ধরে কিম লিং এ পৌছয় একটা ফাকা টেবিল দেখে বসে দুজনে। কিগো মল্লিকা ও অর্ণব কই। আসবে আসবে , হ্যাপি অ্যানিভারসারি বলে ব্যাগ থেকে একটা গোলাপ বের করে অভ্র। একি তোমার মনে আছে , আর মল্লিকার বিবাহ বার্ষিকী বলে এখানে নিয়ে এলে। কিন্তু ওদের জন্য গিফট কিনতে বললে যে। ওটা তোমারই ।শুধু শুধু সারাদিন মিথ্যা কথা বললে । মিথ্যা কোথায় ডার্লিং , এটা তো সারপ্রাইজ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯২৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০৪/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • শেলি ২৭/০৪/২০১৭
    সুন্দর লেখা
  • besh
  • পরশ ২৭/০৪/২০১৭
    বেশ
  • খুব ভাল
  • সাঁঝের তারা ২৭/০৪/২০১৭
    খুব সুন্দর...
    • অনন্ত গোস্বামী ২৭/০৪/২০১৭
      আমার লেখা প্রথ্ম ছোট গল্প এবং তাতে আম্পনার প্রথম মন্তব্য ভীষণ ভালো লাগল। শুভেচ্ছা নেবেন।
 
Quantcast