www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আজকের দিনটি

আরও একটা দিন পালিত হল।নারী দিবস। বেশ ঘটা করেই বিশ্বব্যপী পালন হল দিনটি নাচ,গান,বক্তৃতা,মিটিং,ইটিং,ডেটিং আরও অনেক হাল ডিজাইনের ঢেউয়েই পালন হয়ে গেল।কিন্তু প্রশ্ন হল নারী দিবস পালন করলেই কি নারী মর্যাদা পাবে?নাকি প্রতিটি মুহূর্ত সচেতন হতে হবে নারীকে,আমাদের সমাজকে। না হলে এটি একটি প্রতীকী দিন হিসেবেই পালন করা হবে ।

         ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁঁচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হন।সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। আন্দোলন করার অপরাধে তাদের অনেককে আটক করা হয়। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেক নারী শ্রমিক। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।১৯১০ সালের এদিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির রাজনীতিবিদ এবং জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম স্থপতি ক্লারা জেটকিন ও লুইস জিয়েটস ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। অতঃপর ১৯৭৫ সালে খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।আন্তর্জাতিক নারী দিবস যার আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস।

                        এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়, নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপন,মহিলাদের আর্থিক,রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সমমর্যাদার স্বীকৃতি প্রদানের জন্য।

                         বিভিন্ন দেশে নারীদের প্রতি যে বৈষম্য, নির্যাতন আর অবজ্ঞা-উপেক্ষা চোখে পড়ে তার বিরুদ্ধে গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদেরকে প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ করতে এই দিনটি নারী জাগরণের অভয়বাণী বহন করে আনে। তাই এর আবাহন নিয়ত ও আবেদন শাশ্বত। নারীর সমঅধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী পথ পরিক্রমণে আজ বিশ্বের সচেতন নারীরা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমাদের দেশে একদিকে যেমন সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীদের গৌরবময় সাফল্য ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকতে দেখা যায়, অন্যদিকে তেমনই আবার নারীদের প্রতি বৈষম্য আর নির্যাতন, অবিচার-অত্যাচারের চিত্রও কম চোখে পড়ে না। আমরা শিক্ষা-দীক্ষায়, মেধা-যোগ্যতায়, এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও নারীদের যে অভাবিত সাফল্যজনক ভূমিকা পালন করতে দেখি, তা এক কথায় বিস্ময়কর। আবার যখন নারী নির্যাতন আর বৈষম্যের কালিমালিপ্ত চেহারাটি ফুটে উঠতে দেখি তখন নারীর এই অগ্রযাত্রা অনেকটাই নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে।
                  নারীকে যে সমাজে মানুষরূপে গণ্য করার চেতনা যতবেশি শক্তিশালী, সেই সমাজ তত বেশি সভ্য এবং উন্নত। আমাদের নারী সমাজের সামনে  রানী দুর্গাবতী, প্রীতিলতা,সরোজিনী নাইডু,মাতঙ্গিনী হাজরা, মাদার টেরেসা,ইন্দিরা গান্ধি,প্রতিভা পাতিল,বেগম রোকেয়া আঙ্গেলা র্মেকেল,প্রমুখের  ন্যায় প্রগতিশীল, আধুনিক, বিদূষী ও সত্সাহসী এক মহীয়সী নারী আদর্শরূপে জ্বলজ্বল করছেন।
                           আমাদের সভ্যতা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য চেতনার সহিত সম্পৃক্ত পথ অতিক্রম করে  অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমাদের নারী সমাজ। কবি নজরুল বলেছেন ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’ এই কথার সারবত্তা আমরা সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে পলে পলে  উপলব্ধি করি।নারীর কর্মনিষ্ঠা, সংস্কৃতি চেতনা আর অপত্য স্নেহ-মায়া-মমতা সুধায় জগত্ সংসারে এক অপার্থিব প্রেরণা সঞ্চারিত হয়। মানবজীবনে ও প্রকৃতিতে এই সুধারস সর্বত্রই প্রকটভাবে দৃশ্যমান। আর এই সারসত্যকে হূদয়ঙ্গম করতে কারও কষ্ট হয় না। এখন কর্মজীবনে নারী অনেক অনেক সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে।
                                       নারীকে আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার দিন ফুরিয়ে এসেছে। অবশ্য নারীর উপর হিংসাশ্রয়ী ও পাশবিক নির্যাতন চালাবার মতো পরিস্থিতি যে এখনো সূর্যের মত উজ্জ্বল তা টিভির পর্দায় চোখ রাখলে বা খবরের পাতায় উল্টালেই বুঝা যায়।আজও সমাজের অভ্যন্তরে দগদগে ঘায়ের মতোই  নারী নির্যাতন,খুন ইত্যাদি। এই অপশক্তিকে দমন করতে বিদ্রোহী কবি ‘জাগো নারী জাগো বহ্নি শিখা’ বলে  তাদেরকে জেগে উঠার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

                      আমাদের নারী সমাজকে মনে রাখতে হবে এই দিনটি বৃহৎ লড়াইয়ের স্বীকৃতির দিন। মেকআপ, সুগন্ধি, ফ্যাশনদুরস্ত পোশাক, স্পা ইত্যাদিতে ছাড়ের বানিজ্যিক মতলব সাধনের দিন নয়, এটি নিজের অধিকার আদায়ের দিন,সোজা হয়ে দাঁড়াবার দিন,নিজেকে সমাজে প্রতিষ্টিত করার সংকল্প গ্রহণের দিন,সমাজের হাল ধরার অঙ্গীকারের দিন।
Source-google
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১০৪৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৩/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বিশের সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা।

    আর একটি সংশোধন: ‘বিশ্বে যা কিছু মহান... অর্ধেক তার নর।’ কবিতাংশটি আমাদের জাতীয় কবি নজরুল লিখেছেন।
    শুভকামনা বন্ধু।
 
Quantcast