www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঋষি ইঁদুর আর বেড়ালের কেচ্ছা

এক বনে ছিল এক ঋষি। যিনি ধ্যানে মগ্ন থাকতেন দিন রাত্রি। একদিন একটা রক্তাক্ত ইঁদুর কাতরাতে কাতরাতে ঋষির আস্তানায় আসে। ইঁদুরের কাতরানি শুনে ঋষি চোখ খোলেন। ইঁদুরের কাছে জানতে চান কীভাবে তার এ অবস্থা হলো? ইঁদুর যে জবাব দিল তার সারমর্ম এই- সারা পৃথিবী হিংস্র বেড়ালে ভরে গেছে। সে যে পথেই হাটে সেখানেই বেড়ালের সামনে পড়ে আর অমনি সেই বেড়াল তাকে খেতে উদ্যত হয়। সে প্রাণভয়ে ছুটতে থাকে। একদিন একটা বেড়াল তাকে ধরে ফেলে এবং তার ধারালো নখ আর দাঁত দিয়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। কোনোমতে সে তার প্রাণটা বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু কোথায় যাবে সে বুঝতে পারছে না কারণ সব জায়গায় বেড়াল।

ঋষির মনে খুব মায়া হলো। তিনি ইঁদুরটিকে তার আস্তানায় আশ্রয় দিলেন। তার সেবা শুশ্রুষা করে তাকে সুস্থ করে তুললেন। ঋষি ইঁদুরকে সাবধান করে দিলেন এই বলে, সে যেন কখনো আস্তানার বাইরে না যায়। ইঁদুর ঋষিকে কথা দিল সে কোনোদিন ঋষির অনুমতি ছাড়া আস্তানার বাইরে যাবে না। ঋষির পরম মমতায় ইঁদুর আস্তানায় সুখে দিন কাটাতে লাগলো।

দিন যায়, মাস যায় ইঁদুর ঋষির আস্তানায় সুখের সাগরে ভাসতে থাকে। তার জীবনটা আনন্দে আনন্দে ভরে থাকে। এভাবে সুখে দিন কাটাতে কাটাতে ইঁদুর তার কষ্টের অতীতটাকে ভুলে যায়। সে ভুলে যায় আস্তানার বাইরে বেড়ালের আনাগোনা, যারা খুব ভয়ঙ্কর। ঋষির আস্তানায় এত সুখ আর সুন্দরের সমারোহ, ইঁদুর না ভুলে করবেই বা কী?

ইঁদুর আস্তানার বাইরে না গেলেও আস্তানার ভেতরে বসে জানালা দিয়ে বাইরের আকাশ, গাছ, লতাপাতা, ফুল পাখি এসব দেখতো আর মুগ্ধ হয়ে যেতো।

একদিন ইঁদুর জানালা দিয়ে আস্তানার বাইরের সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ তার চোখে পড়ে আস্তানার বাইরে খুব সুন্দর একটা বেড়াল চুপচাপ বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। একদিন, দুইদিন এভাবে প্রতিদিনই ইঁদুর দ্যাখে বেড়ালটা আপন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। একিদন ইঁদুর বেড়ালটাকে ডাক দিয়ে জানতে চায়, কী করে সে বসে বসে? বেড়াল জানায় সে আকাশ দ্যাখে। আকাশের নীল তার খুব ভাল লাগে তাই। এবার বেড়াল ইঁদুরকে প্রশ্ন করে, তুমি আকাশ দ্যাখো? ইঁদুর জবাব দেয়, হ্যা। কেমন লাগে আকাশ? ইঁদুর বলে, খুব ভাল লাগে। এরকম টুকটাক কথা হয় ইঁদুর আর বেড়ালের। ইঁদুরের মনে হয় বেড়ালটার ভেতরেও কেমন একটা ঋষি ঋষি ভাব! সেও চুপচাপ বসে বসে কী যেন ভাবে।

একিদন জানালা ধরে বসে থাকা ইঁদুরের সাথে কথা বলতে বলতে বেড়াল জানতে চায়, সে ওখানে কেন? ইদুর জানায় এটা এক ঋষির আস্তানা। তিনি তার অসহায় অবস্থায় তাকে এখানে আশ্রয় দিয়েছেন। ইঁদুর এও জানায় সে এখানে অনেক আরামে আর নিরাপদে আছে। বেড়াল বলে, তোমার ঋষির লাভ? ইঁদুর বলে ওনার কোন লাভ নেই। ওনার হৃদয় মমতার আঁকর। যে-ই ওনার কাছে আন্তরিকভাবে আশ্রয় চায় তাকেই তিনি আশ্রয় দেন। বেড়াল বলে, তুমি কি সারাজীবন এই আস্তানায় বন্দী হয়ে কাটাতে চাও? বাইরের সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে চাও না?

ইঁদুর জবাব দেয়, না। এখানে বসেই আমি সারা পৃথিবী দেখতে পাই। তাছাড়া আস্তানার বাইরে যেতে ঋষি মানা করে দিয়েছেন। বেড়াল ইঁদুরকে এই আস্তানার বাইরের আরো কত কত ভাল কিছু দেখার আছে প্রাণপণে তা বোঝানোর চেষ্টা করে। ইঁদুর মুগ্ধ হয়ে যায় বেড়ালের এতকিছু জানার জ্ঞান দেখে। বেড়ালের জ্ঞানের কারণে আর তার সুন্দর সুন্দর কথা শুনে ইঁদুর বেড়ালকে ঋষির আস্তানায় বেড়াতে আসতে বলে। ইঁদুর বলে, আমার ঋষি অনেক ভাল আর মায়ায় ভরা মানুষ। তুমি একদিন বেড়াতে আসো তোমার অনেক ভাল লাগবে। বেড়াল সম্মতি জানিয়ে বলে, কোনো একিদন সময় করে বেড়িয়ে যাবে সে।

জানালার ভেতরে ইঁদুর আর বাইরে বেড়াল......এভাবেই তাদের মধ্যে আলাপচারিতা চলতে থাকে। দিন গড়িয়ে রাত, রাত ফুরিয়ে দিন; কেটে যায় অনেকটা সময়। ইঁদুরের বেড়ালের প্রতি ভাল লাগা বাড়তেই থাকে। কিন্তু ঋষির কথা একমুহূর্তও ভোলে না ইঁদুর। সে আস্তানার বাইরে না আসলেও বেড়ালের আহ্বানে জানালা ছেড়ে দরজার কাছে এসে বেড়ালের সাথে বেশ খানিকটা সময় গল্প করে আবার আস্তানায় ফিরে যায়। বেড়াল ইঁদুরকে একেক দিন একেক বিষয় দিয়ে চমকে দেয়। ইঁদুর ভাবে, যাক আস্তানার বাইরে অন্তত একটা ভাল সাথী পাওয়া গেল। বেড়ালও তাকে আশ্বস্ত করে যে সে আস্তানার বাইরেও নিরাপদেই থাকবে বেড়ালের কাছে।

বেড়ালের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে ইঁদুর ভাবে, আমি তো আস্তানা ছেড়ে যাচ্ছি না, কিছুটা সময় বেড়ালের সাথে বাইরের পৃথিবীর সৌন্দর্যটা দেখে আসি। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ইঁদুর অল্প কিছু সময়ের জন্য বেড়ালের সাথে আস্তানার বাইরে বেরিয়ে আসে। আহ! কী সুন্দর পৃথিবী। সে বেড়ালকে ধন্যবাদ জানায় তাকে আস্তানার বাইরের সুন্দর পৃথিবীটা দেখানোর জন্য। বেড়ানোর এক ফাঁকে ইঁদুর বেড়ালকে স্মরণ করিয়ে দেয় তার আস্তানায় ফেরার কথা। বেড়াল ইঁদুরকে বলে, তুমি এখন আস্তানার বাইরেও নিরাপদ, চাইলে তুমি এখানেও থাকতে পারো। ইঁদুর বলে, না। আস্তানার বাইরে আমি থাকতে চাই না। একটু দেখে গেলাম এই বেশ।

ইঁদুর এখন মাঝে মাঝেই বেড়ালের সাথে আস্তানার বাইরে বেড়াতে আসে। সেদিনও ইঁদুর বেড়ালের সাথে গল্প করার জন্য আস্তানার বাইরে আসে। কিছুটা সময় পার হওয়ার পরই হঠাৎ বেড়াল তার ধারালো নখ বের করে আর ইঁদুরের গায়ে আঁচড় বসিয়ে দেয়। আঁচড় খেয়েই ইঁদুরের সম্বিৎ ফেরে। আরে এ তো বেড়াল! ততক্ষণে ইঁদুরের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। সে বুঝতে পারে আস্তানার বাইরে পা দেয়াটাই তার চরম ভুল হয়ে গেছে তা ক্ষণিকের জন্য হলেও। সে দৌড়ে আস্তানায় ফিরে যায়। নখের আঁচড়ের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে, পাশাপাশি এটা ভেবে সে স্বস্তি পায় যে, ভাগ্যিস বেশী দূরে যায় নি; তাহলে তো প্রাণটাই বেঘোরে হারাতে হতো।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ১১৯৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/১০/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • গল্পটি সুন্দর। কিন্তু কোথাকার গল্প?
    ঠিক মনে করতে পারছি না।
    • প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ঋষিকে নিয়ে একটা গল্প আছে যার নাম ঝড়ের পাখি। তার সাথে এটার কোন মিল নাই। আমি লিখেছি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে।
  • মধু মঙ্গল সিনহা ১৭/১০/২০১৭
    অনেক সুন্দর লিখা
  • রায়হান আজিজ ১৭/১০/২০১৭
    ভাল লেগেছে
  • আজাদ আলী ১৭/১০/২০১৭
    Valo laglo
 
Quantcast